যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক বিমান হামলায় ইরানের পরমাণু কর্মসূচি অন্তত এক থেকে দুই বছর পিছিয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগন। যদিও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এর আগেই দাবি করেছিলেন, হামলার মাধ্যমে ইরানের পরমাণু সক্ষমতা “সম্পূর্ণ ধ্বংস” করা হয়েছে। সূত্র: আল জাজিরা
বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়।
পেন্টাগনের মুখপাত্র শন পারনেল বলেন, “আমরা অন্তত এক থেকে দুই বছরের জন্য তাদের কর্মসূচি স্থগিত করতে পেরেছি- গোয়েন্দা বিশ্লেষণ এমনটাই বলছে।” তিনি এই হামলাকে “সাহসী ও কার্যকর অভিযান” হিসেবে বর্ণনা করেন।
উল্লেখ্য, গত ২১ জুন যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ওপর স্টিলথ বোমারু বিমান বি-২ দিয়ে হামলা চালায়। এরপর থেকে ট্রাম্প দাবি করে আসছেন, ইরানের পরমাণু কার্যক্রমের ‘সমাপ্তি’ ঘটেছে। তাঁর ভাষায়, “ইরানের পরমাণু কর্মসূচিকে এমনভাবে ধ্বংস করা হয়েছে, যেমন আগে কেউ দেখেনি।”
তবে বেশ কয়েকটি মার্কিন সংবাদমাধ্যমে ফাঁস হওয়া এক গোয়েন্দা রিপোর্টে বলা হয়েছিল, হামলায় মূল অবকাঠামো ধ্বংস না হওয়ায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সীমিত এবং কর্মসূচি কেবল কয়েক মাস পিছিয়ে গেছে।
তেহরান এ বিষয়ে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষতির পরিমাণ জানায়নি। যদিও সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি মন্তব্য করেছেন, “ট্রাম্প ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা নিয়ে অতিরঞ্জিত বক্তব্য দিয়েছেন।” তবে ইরানের কয়েকজন কর্মকর্তা স্বীকার করেছেন, হামলায় পরমাণু স্থাপনায় “গুরুতর ক্ষতি” হয়েছে।
হামলার প্রকৃত প্রভাব নিরপেক্ষভাবে নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। ইরানের ভূগর্ভস্থ পরমাণু স্থাপনাগুলো স্যাটেলাইট চিত্রে স্পষ্ট বোঝা যায় না। বিশেষ করে ফোর্দো ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রে কী ঘটেছে, তা এখনও নিশ্চিত নয়। হামলার আগে এলাকা থেকে ট্রাক সরিয়ে নেওয়ার চিত্র দেখা গেছে, যা ইউরেনিয়াম মজুদ সরিয়ে নেওয়ার ইঙ্গিতও দিতে পারে।
আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ) জানিয়েছে, হামলার পর রেডিওধর্মী বিকিরণের তীব্রতা বাড়েনি। সংস্থার মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসি বলেন, “ইউরেনিয়াম ভর্তি কন্টেইনার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কিনা, নাকি স্থানান্তর করা হয়েছে- সেটা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।” তাঁর মতে, ইরান কয়েক মাসের মধ্যেই সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রম পুনরায় শুরু করতে পারে।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, হামলার আগে আইএইএ নিয়মিত ইরানের পরমাণু স্থাপনাগুলো পর্যবেক্ষণ করত। তবে যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে ইরানি পার্লামেন্ট একটি আইন পাস করে সংস্থাটির সঙ্গে সহযোগিতা স্থগিত করে। তাদের অভিযোগ, আইএইএ ইসরায়েলের সঙ্গে যৌথভাবে তথ্য পাচার করেছে- যদিও সংস্থাটি এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
উল্লেখযোগ্যভাবে, আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী পারমাণবিক কেন্দ্রের মতো ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনায় হামলা চালানো জেনেভা কনভেনশনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।