যুক্তরাষ্ট্র থেকে সামরিক সহায়তা স্থগিতের সিদ্ধান্তে রাশিয়ার আগ্রাসন আরো বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে ইউক্রেন। দেশটির মতে, এই পরিস্থিতিতে যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, গত মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে দেওয়া কিছু অস্ত্র সহায়তা স্থগিত করার ঘোষণা দেয়। বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, মার্কিন সামরিক ভাণ্ডারের অস্ত্র মজুত বিপজ্জনকভাবে হ্রাস পাওয়ায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র আন্না কেলি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ সবার আগে”- এই নীতির আলোকে প্রতিরক্ষা বিভাগের পর্যালোচনার ভিত্তিতে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
এ অবস্থায় ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানান, অস্ত্র সহায়তা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় এখন দুই দেশের মধ্যে পর্যালোচনা চলছে। ইউক্রেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সতর্ক করে বলেছে, “এই ধরনের দেরি যুদ্ধ ও সন্ত্রাস চালিয়ে যেতে আগ্রাসী শক্তিকে উৎসাহিত করে, শান্তির পথে ঠেলে দেয় না।”
বিশেষ করে ইউক্রেন এখন রাশিয়ার ধারাবাহিক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা প্রতিহত করতে আকাশ প্রতিরক্ষা জোরদার করার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে।
অস্ত্র সহায়তা স্থগিতের প্রেক্ষাপটে বুধবার এক মার্কিন কূটনীতিককে তলব করে ইউক্রেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তবে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক নোটিশ পায়নি। সেইসঙ্গে জনগণকে অসম্পূর্ণ তথ্যে বিভ্রান্ত না হওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে।
এ বিষয়ে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য, যুদ্ধ থামাতে হলে “আগ্রাসনকারীর ওপর ধারাবাহিক ও সম্মিলিত চাপ বজায় রাখতে হবে।”
বিবিসির তথ্যমতে, অস্ত্র সহায়তা স্থগিতের ঠিক আগেই রাশিয়া ইউক্রেনের ওপর সর্ববৃহৎ বিমান হামলা চালায়। এতে পাঁচ শতাধিক ড্রোন, ব্যালিস্টিক ও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয় বিভিন্ন শহরে। এই প্রেক্ষাপটেই ওয়াশিংটন ইউক্রেনকে দেওয়া কিছু অস্ত্র সহায়তা স্থগিত করে।
যদিও মার্কিন প্রশাসন স্পষ্ট করে জানায়নি ঠিক কোন অস্ত্র সহায়তা বন্ধ করা হয়েছে, তবুও এনবিসি নিউজ সূত্রে বলা হয়, এর মধ্যে রয়েছে প্যাট্রিয়ট ইন্টারসেপ্টর, হাউইৎজার গোলাবারুদ, ক্ষেপণাস্ত্র ও গ্রেনেড লঞ্চার।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার পূর্ণমাত্রিক আগ্রাসনের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে এক লক্ষ কোটি (১০০ বিলিয়ন) ডলারের বেশি সামরিক সহায়তা দিয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসনের একাংশ আশঙ্কা করছে, এতে মার্কিন অস্ত্র ভাণ্ডার অতিরিক্তভাবে খালি হয়ে পড়ছে।
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, “ইউক্রেনে যত কম অস্ত্র পাঠানো হবে, যুদ্ধের অবসান ততই এগিয়ে আসবে।”
অন্যদিকে ইউক্রেনীয় সংসদ সদস্য ফেদির ভেনিস্লাভস্কি বলেন, এই সিদ্ধান্ত “বেদনাদায়ক” এবং রাশিয়ার সন্ত্রাসী হামলার প্রেক্ষাপটে তা “চরম দুর্ভাগ্যজনক”। ইউক্রেনের একটি সামরিক সূত্র জানায়, “আমরা মার্কিন গোলাবারুদের ওপর অনেকখানি নির্ভরশীল। ইউরোপীয় সহায়তা থাকলেও আমেরিকার অস্ত্র ছাড়া টিকে থাকা কঠিন।”
উল্লেখ্য, ইউরোপীয় দেশগুলোও গত কয়েক বছরে ইউক্রেনকে কয়েকশো কোটি ডলারের অস্ত্র সহায়তা দিয়েছে। তবে সেখানে রাজনৈতিক মতপার্থক্যও রয়েছে। চেক প্রেসিডেন্ট পেত্র পাভেল বলেছেন, তিনি ইউক্রেনের পক্ষে থাকলেও জাতীয় নির্বাচনের আগে গোলাবারুদ সহায়তা চালু রাখা নিয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না।
এদিকে সিবিএস নিউজ জানায়, মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সূত্র বলেছে, এই সহায়তা স্থগিতের মূল কারণ দেশের অস্ত্র ভাণ্ডারের দ্রুত খালি হয়ে যাওয়া। যদিও হোয়াইট হাউস বলছে, “আমেরিকার সামরিক শক্তির দৃঢ়তা প্রশ্নাতীত- চাইলে ইরানকে জিজ্ঞেস করে দেখুন।”
ডিফেন্স পলিসির আন্ডারসেক্রেটারি এলব্রিজ কোলবি মন্তব্য করেছেন, “প্রেসিডেন্টকে সহায়তা চালিয়ে যাওয়ার বিকল্প পথ দেখানো হচ্ছে, তবে নিশ্চিত করতে হবে যেন এতে যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব প্রস্তুতি ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।”