আফগানিস্তানের দক্ষিণাঞ্চলের শহর কান্দাহারে রাস্তায় বের হলে চোখে পড়ে অদ্ভুত এক দৃশ্য। পুরনো ড্রাম, মোটা পাইপ আর ধুলোমাখা টিনের তৈরি কিছু যন্ত্র বসানো হয়েছে ট্যাক্সির ছাদে। প্রথম দেখায় বোঝা না গেলেও এগুলো আসলে স্থানীয় চালকদের হাতে তৈরি এয়ার কুলার।
চলতি গ্রীষ্মে শহরটির তাপমাত্রা প্রায়ই ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যাচ্ছে। গাড়ির এসি কাজ না করায় চালকরা নিজেরাই বের করেছেন সমাধান—ট্যাক্সির ছাদে পানি-চালিত কুলার বসিয়ে তাপ থেকে কিছুটা রেহাই নেওয়ার চেষ্টা।
বার্তা সংস্থা এএফপিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ট্যাক্সিচালক আব্দুল বারী বলেন, “এই কুলার এসির চেয়ে ভালো। এসি শুধু সামনের দিক ঠাণ্ডা রাখে, আর এই কুলার পুরো গাড়িতে বাতাস ছড়িয়ে দেয়।”
এক ভিডিওতে দেখা যায়, বারী আঠালো টেপ দিয়ে কুলারের পাইপটি গাড়ির জানালায় লাগাচ্ছেন। কুলারের মূল অংশটি ঠিক করতে তাঁর একজন সহকারী ছাদে উঠে কাজ করছেন। একমাত্র ঝামেলা—প্রতিদিন অন্তত দুইবার কুলারের পানির ট্যাংক ভরতে হয়।
তবুও এই উপকরণকে আশীর্বাদই মানছেন চালকরা।
৩২ বছর বয়সী গুল মোহাম্মদ জানালেন, কয়েক বছর আগে প্রচণ্ড গরমে তিনি প্রথম এ ধরনের কুলার ব্যবহার শুরু করেন। তাঁর ভাষায়, “এসি ঠিক করাতে খরচ অনেক। তাই এক টেকনিশিয়ানের সাহায্যে মাত্র তিন হাজার আফগানিতে একটি কাস্টম কুলার বানিয়ে ফেলি।”
যাত্রীদের কাছেও এই উদ্যোগ প্রশংসিত হচ্ছে। ১৯ বছর বয়সী যাত্রী নোরুল্লাহ বলেন, “কুলার ছাড়া চলা খুব কঠিন। এমনকি আমি সবসময় গরমের ওষুধ সঙ্গে রাখি।” সম্প্রতি প্রচণ্ড গরমে অসুস্থ হয়ে তাঁকে স্যালাইন নিতে হয়েছিল বলেও জানান তিনি।
আফগানিস্তানে চলতি বছরের এপ্রিল থেকে জুন—এই সময়টুকু ছিল ইতিহাসের সবচেয়ে উষ্ণ বসন্তকাল। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (FAO) জানিয়েছে, দেশজুড়ে ভয়াবহ খরা দেখা দিয়েছে। এতে ফসল ও গ্রামীণ জীবনব্যবস্থা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দেশটির মানবিক সংকট আরও গভীর হবে।
বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র দেশ আফগানিস্তান জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর একটি। ২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতা নেওয়ার পর জাতিসংঘের জলবায়ু সংলাপ থেকেও বাদ পড়েছে দেশটি।
তবে সবকিছুর মধ্যেও জীবন থেমে নেই। নিজেদের মতো করে টিকে থাকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন সাধারণ মানুষ—ঠিক যেমন কান্দাহারের এই ট্যাক্সিচালকরা, যাঁরা এক ফোঁটা ঠাণ্ডা হাওয়ার জন্য ছাদে বানিয়ে ফেলেছেন নিজেদের হাতে তৈরি ‘আশার কুলার’।

