যুক্তরাজ্য রাশিয়ার আগ্রাসনের সম্ভাব্য হুমকি মোকাবেলায় ইউরোপে একটি “ড্রোন ওয়াল” স্থাপনের পরিকল্পনা করছে। দেশটির প্রতিরক্ষা সচিব জন হিলি জানিয়েছেন, নতুন ব্রিটিশ নির্মিত কম খরচের আনম্যানড ড্রোনগুলো ন্যাটো সদস্য দেশগুলোর সীমানা রক্ষা করবে এবং রাশিয়ার বিমান ও ড্রোন আক্রমণ ঠেকাতে সাহায্য করবে।
ড্রোনগুলো ইউক্রেনের সঙ্গে যৌথভাবে তৈরি করা হবে, যা ন্যাটো এবং ইউক্রেনের সীমানায় মোতায়েন করা হবে। হিলি জানান, ড্রোনগুলো ইতিমধ্যেই ইরানি-নির্মিত শাহেদ আত্মঘাতী ড্রোনের বিরুদ্ধে কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে এগুলো উৎপাদন খরচে প্রতিদ্বন্দ্বীর তুলনায় প্রায় দশ ভাগ কম।
সাম্প্রতিক সময়ে পোল্যান্ড ও এস্তোনিয়ার আকাশসীমা লঙ্ঘনের ঘটনায় ইউরোপীয় দেশগুলো উদ্বিগ্ন। এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাজ্য পোল্যান্ডে রাফ টাইফুন যুদ্ধবিমান মোতায়েন করেছে, যা মস্কোর প্রতি শক্তি প্রদর্শনের অংশ। এছাড়া, ডেনমার্ক ও নরওয়েতে সন্দেহজনক ড্রোন আক্রমণ দেখা গেছে। শিডল্যান্ডের কার্লস্ক্রোনা দ্বীপপুঞ্জে অচেনা ড্রোন পর্যবেক্ষণের খবরও আসে।
প্রতিরক্ষা সচিব হিলি বলেন, ন্যাটো দেশের পক্ষ থেকে এই ধরনের “অবিবেচক” বা “ঝুঁকিপূর্ণ” পদক্ষেপের বিরুদ্ধে যথাযথ প্রতিক্রিয়া নেওয়া হবে। নতুন ড্রোনগুলোর উদ্দেশ্য শুধু আকাশ সীমা রক্ষা নয়, ভবিষ্যতে যুক্তরাজ্যের সামরিক স্থাপনাগুলো এবং গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোও রক্ষা করা যাবে।

ডেনমার্কের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দেশটির বড় বড় সামরিক ঘাঁটিতে শুক্রবার রাতের মধ্যেই ড্রোন দেখা গেছে। নরওয়ের প্রধান সামরিক বিমানঘাঁটিতেও দুইটি ড্রোন পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। যদিও মস্কো কোনো হস্তক্ষেপের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে।
এসময়ে, এস্তোনিয়া তাদের আকাশসীমা লঙ্ঘনের খবর দিয়েছে, যেখানে তিনটি রাশিয়ান মিগ-৩১ যুদ্ধবিমান অনুমতি ছাড়াই ১২ মিনিট দেশটির আকাশে অবস্থান করেছিল। এ অবস্থায় এস্তোনিয়া তাদের রাশিয়ার সীমান্তে বেড়ার সম্প্রসারণ ও প্রতিট্যাংক খাল নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ন্যাটো মহাসচিব মার্ক রুট্টে এবং মার্ক ট্রাম্প দু’জনই বলেছেন, যেকোনো দেশ যদি তাদের আকাশসীমা লঙ্ঘন করে, তখন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জাতিসংঘে বলেছেন, ইউরোপকে রাশিয়ার আগ্রাসন ঠেকাতে তৎপর হতে হবে, নইলে যুদ্ধ আরও “বিস্তৃত ও গভীর” হয়ে যাবে।
এই খবরের পাশাপাশি হিলি একটি নতুন “ফোর্সেস ফার্স্ট” হাউজিং প্রোগ্রামের কথা ঘোষণা করেছেন। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের খালি জমিতে এই উদ্যোগে সামরিক কর্মী ও তাদের পরিবারের জন্য নতুন বাসস্থান তৈরি করা হবে। তিনি জানিয়েছেন, পরবর্তী বছরগুলোতে ১ লাখ বাড়ি তৈরি করা সম্ভব, যার মধ্যে এই সংসদীয় মেয়াদেই কয়েক হাজার বাড়ি নির্মিত হবে। এই প্রকল্পে ফোর্সের পরিবার এবং অবসরপ্রাপ্তদের প্রথম অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
হিলি বলেন, “আমরা চাই যে সেনা ও তাদের পরিবার বুঝুক, এই সরকার সব সময় তাদের পাশে আছে।”