পাকিস্তান আবারও দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক রাজনীতিতে নতুন সমীকরণের কথা বলছে। সার্ক বছরের পর বছর অচল পড়ে থাকার প্রেক্ষাপটে এবার বাংলাদেশ, চীন ও পাকিস্তানকে নিয়ে নতুন সহযোগিতা কাঠামো গঠনের ধারণা তুলে ধরেছে ইসলামাবাদ।
গত ৩ ডিসেম্বর ইসলামাবাদ কনক্লেভ ফোরামে দেশটির উপপ্রধানমন্ত্রী ইশহাক দার বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার উন্নয়ন ভারতের জটিল ও অনমনীয় অবস্থানের কারণে আটকে থাকা উচিত নয়। তাই বাংলাদেশ ও চীনের সঙ্গে মিলেই নতুন আঞ্চলিক প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা সম্ভব।
তিনি আরও ইঙ্গিত দেন—প্রয়োজনে এশিয়ার বাইরের দেশগুলোকেও এই কাঠামোয় যুক্ত করা যেতে পারে। চলতি বছরের জুনে ঢাকা–বেইজিং–ইসলামাবাদের ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা নিয়ে যে আলোচনা হয়েছিল, সেটিই এই ধারণার ভিত্তি তৈরি করেছে।
২০১৬ সালে ভারত–পাকিস্তান উত্তেজনা চরমে ওঠার পর থেকে সার্ক কার্যত নিষ্ক্রিয়। আশপাশে ২০০ কোটির বিশাল বাজার থাকলেও সদস্য দেশের ভেতর পারস্পরিক বাণিজ্য মাত্র ৫ শতাংশে আটকে আছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই স্থবির অবস্থাই পাকিস্তানকে বিকল্প পথ চিন্তা করতে বাধ্য করেছে।
সাম্প্রতিক সময়ে ভারত–পাকিস্তান সম্পর্ক আগের চেয়ে আরও খারাপ দিকে গেছে। অন্যদিকে গণআন্দোলনের পর শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়াকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ–ভারত সম্পর্কেও নতুন উত্তেজনা তৈরি হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে ইসলামাবাদ মনে করছে—ঢাকার সঙ্গে তাদের যোগাযোগ তুলনামূলকভাবে ইতিবাচক অবস্থানে আছে। আর এই রাজনৈতিক বাস্তবতাই পাকিস্তানের নতুন জোট প্রস্তাবকে সামনে নিয়ে এসেছে।
আঞ্চলিক বিশ্লেষকদের মতে, ধারণাটি আকর্ষণীয় হলেও বাস্তবতা সহজ নয়। দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনৈতিক বাস্তবতা, ভারতের সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়া, নিরাপত্তা ইস্যু—সব মিলিয়ে এ ধরনের জোট দাঁড় করানো কঠিন হতে পারে।
তবে তারা এটাও বলছেন—বাংলাদেশ–ভারত সম্পর্কের বর্তমান টানাপোড়েন, চীন–পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠতা এবং সার্কের দীর্ঘ অচলাবস্থা—সবকিছু মিলিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে নতুন সমীকরণ তৈরি হতে পারে। পাকিস্তানের প্রস্তাব সেই সমীকরণের একটা সম্ভাব্য ইঙ্গিত মাত্র।
সার্ক নিস্ক্রিয় থাকায় আঞ্চলিক সহযোগিতার নতুন পথ খুঁজছে কিছু দেশ। পাকিস্তানের এই উদ্যোগ সেই চেষ্টা–প্রচেষ্টারই অংশ। তবে এটি সফল হবে কি না—তা নির্ভর করবে রাজনৈতিক বাস্তবতা, আঞ্চলিক শক্তির অবস্থান এবং বাংলাদেশের ভূমিকার ওপর।

