খেলাপি ঋণ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন নিয়ম বেসরকারি খাতবিরোধী পদক্ষেপ। এতে বিনিয়োগ ব্যাহত হবে। কর্মসংস্থানে প্রভাব পড়বে। সব মিলিয়ে দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতায় প্রভাব পড়বে।
আইএমএফের কাছ থেকে সরকারের ঋণ নেওয়ার শর্ত হিসেবে অনেক নিয়মকানুন করতে হচ্ছে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, তখন বাস্তবতা লুকানো হতো। এখন তো অর্থনীতির ক্ষত বেরিয়ে আসছে। ফলে এখন এই সিদ্ধান্তের ফল ভালো হবে না বলেই মনে করছি।
বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাতের কথা বলব। বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের ৮৪ শতাংশই এই খাত থেকে আসে। ফলে সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য তৈরি পোশাক খাতের স্থিতিশীলতা জরুরি। কিন্তু এই খাতের অনেক প্রতিষ্ঠানই ভালো অবস্থায় নেই। গত জুলাই মাসে আন্দোলনের সময় উৎপাদন বন্ধ ছিল বেশ কিছুদিন। এরপর শ্রমিক অসন্তোষ চলছে। অনেক প্রতিষ্ঠানের নগদ অর্থপ্রবাহের ঘাটতি আছে। ফলে খেলাপি ঋণ বেড়েছে।
প্রতিষ্ঠানগুলোর দোষে খেলাপি ঋণ বেড়েছে তা নয়; একদিকে ডলারের বিনিময় হার বেড়েছে, আরেক দিকে জ্বালানির দাম ও শ্রমিকের মজুরি বেড়েছে। জ্বালানির দাম ও শ্রমিকদের মজুরি প্রায় একই সময় বেড়েছে। এরপর সামনে দুটি ঈদ। এরপর এপ্রিল মাস থেকে খেলাপি ঋণের নতুন এই নীতি কার্যকর হলে তৈরি পোশাক খাতে বড় ধরনের ধাক্কা আসতে পারে। সেটা হলে সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাও নষ্ট হবে। আশঙ্কা করছি, খেলাপি ঋণ আরও বেড়ে যাবে।
কথা হলো, অর্থনীতি যদি আদর্শ অবস্থায় থাকত, তাহলে খেলাপি ঋণের এই সিদ্ধান্ত ঠিক ছিল। বাস্তবতা তা নয়। যদি এমন হতো, সহনীয় সুদে ঋণ পাওয়া যেত, ব্যাংকের তারল্য ও পরিচালনব্যবস্থা ভালো, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা নেই, তাহলে এই সিদ্ধান্ত ঠিক ছিল। সেই সঙ্গে এলডিসি উত্তরণজনিত বিনিয়োগ আছে। এই পরিস্থিতিতে বিনিয়োগের ব্যয় বাড়লে পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে। কর্মসংস্থানের গতি কমে যাবে। এতে সামাজিক অস্থিরতা তৈরি হতে পারে।
সম্প্রতি মুডিস বাংলাদেশের ঋণমানের অবনমন ঘটিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বিদেশ থেকেও আমাদের পক্ষে অর্থায়ন সংগ্রহ করা কঠিন হয়ে যাবে।
আরেকটি বিষয়, আমরা ভেবেছিলাম, এই সরকার উইলফুল ডিফল্টার বা ইচ্ছাকৃতভাবে যারা ঋণখেলাপি হয়েছে, তাদের প্রতি আনুকল্য দেখাবে না। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে তাদের আবারও পৃষ্ঠপোষকতা করা হচ্ছে। অন্যদের জন্য যা করা হচ্ছে না।
পরিশেষে বলব, এই সিদ্ধান্ত সময়োচিত হলো না। সরকারের উচিত হবে, আইএমএফের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে নতুন করে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা যেতে পারে।
শামস মাহমুদ
(বিজিএমইএর পরিচালক) সংগৃহীত : প্রথম আলো