২০২৪ সাল ছিল বৈশ্বিক পুঁজিবাজারের জন্য মিশ্র অভিজ্ঞতার বছর। অর্থনৈতিক সংকট, রাজনৈতিক অস্থিরতা, বৈশ্বিক যুদ্ধ প্রেক্ষাপট, জ্বালানি তেলের মূল্য ওঠানামা এবং যুক্তরাষ্ট্রের সুদহার বৃদ্ধি কিংবা হ্রাসের মতো বিষয়গুলো বিশ্বব্যাপী পুঁজিবাজারে বড় প্রভাব ফেলেছে। তবে বাংলাদেশের পুঁজিবাজার এসব বৈশ্বিক প্রবণতার সঙ্গতিহীনভাবে চলেছে। যেখানে কোনো সুস্পষ্ট কারণ ছাড়াই হঠাৎ সূচকের পতন বা টানা নিম্নমুখী প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে।
বিদায়ী ২০২৪ সালে বিশ্বের উল্লেখযোগ্য পুঁজিবাজারগুলোতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সূচক ঊর্ধ্বমুখী ছিল। যুক্তরাষ্ট্রের তিনটি প্রধান সূচক এসঅ্যান্ডপি ৫০০, ডাও জোনস ইন্ডাস্ট্রিয়াল এবং নাসডাক কম্পোজিটে শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে। এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক বছরজুড়ে ২৫ দশমিক ১৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৫৯৭০ দশমিক ৮৪ পয়েন্টে। ডাও জোনস সূচক বেড়েছে ১৪ দশমিক ৭ শতাংশ এবং নাসডাক কম্পোজিটে সবচেয়ে বেশি ৩১ দশমিক ৩৮ শতাংশ বৃদ্ধি দেখা গেছে। যুক্তরাজ্যের এফটিএসই ১০০ সূচকও ৫ দশমিক ১১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
এশিয়ার মধ্যে চীনের সাংহাই সূচক ১৪ দশমিক ৫৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেলেও তিন বছরের গড় হিসাবে এটি ৬ দশমিক ৩৯ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা এবং ভিয়েতনামের পুঁজিবাজারগুলো ইতিবাচক অবস্থানে ছিল। বিশেষ করে পাকিস্তানের করাচি ১০০ সূচক বছরে ৮৩ দশমিক ৭৮ শতাংশ এবং তিন বছরের গড়ে ১৫৭ দশমিক ৩৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। শ্রীলংকার সিএসই সূচক বছরজুড়ে ৪৮ দশমিক ৫৬ শতাংশ এবং তিন বছরের গড়ে ২৯ দশমিক ৪৬ শতাংশ বেড়েছে।
বাংলাদেশের পুঁজিবাজার:
বিশ্বের বেশিরভাগ পুঁজিবাজারে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা গেলেও বাংলাদেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ডিএসইএক্স সূচক বিদায়ী বছরে উল্লেখযোগ্যভাবে ১৬ দশমিক ৪৯ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৫২১৬ পয়েন্টে। তিন বছরের গড় হিসাবে সূচকটি ২২ দশমিক ৮০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। বিশেষ কোনো রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক কারণ ছাড়াই এমন ধারাবাহিক পতন বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের জন্য অস্বাভাবিক।
এশিয়ার অন্যান্য বাজার-
ভারতের বিএসই সেনসেক্স বিদায়ী বছরে ৮ দশমিক ২৪ শতাংশ বেড়ে ৭৮১৮২ পয়েন্টে পৌঁছেছে। যা তিন বছরের গড়ে ৩৪ দশমিক ২৩ শতাংশ বৃদ্ধি। ভিয়েতনামের ভিএন-৩০ সূচক ১৯ দশমিক ৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেলেও তিন বছরের গড়ে এটি হ্রাস পেয়েছে ১২ দশমিক ২৭ শতাংশ। পাকিস্তানের করাচি ১০০ সূচকের পাশাপাশি শ্রীলংকার সিএসই সূচকও উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে।
অন্যদিকে ইন্দোনেশিয়ার আইডিএক্স কম্পোজিট সূচক ৩ দশমিক ১ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে এবং ফিলিপাইনের পিএসইআই সূচক সামান্য ১ দশমিক ২২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের সঙ্গে এসব দেশের তুলনা করলে স্পষ্ট হয় যে, কোনো বিশেষ প্রেক্ষাপট ছাড়াই বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে পতনের প্রবণতা দীর্ঘস্থায়ী হয়েছে।
বিশ্বব্যাপী পুঁজিবাজারের ইতিবাচক প্রবণতা থেকে শিক্ষা নিয়ে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে কাঠামোগত পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হচ্ছে। সুশাসন, নীতিগত স্বচ্ছতা এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরানোর জন্য প্রয়োজন কার্যকর পদক্ষেপ। ইবিএল সিকিউরিটিজের প্রতিবেদনেও এ ধরনের সুপারিশ উল্লেখ করা হয়েছে, যা বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
২০২৪ সালের বৈশ্বিক পুঁজিবাজারের অভিজ্ঞতা এবং বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের সমস্যাগুলো বিশ্লেষণ করলে সুস্পষ্ট হয় যে, অভ্যন্তরীণ নীতিমালা এবং বৈশ্বিক প্রবণতার মধ্যে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করাই এই খাতের ভবিষ্যৎ উন্নতির প্রধান চাবিকাঠি।

