দীর্ঘদিন ধরেই দেশের পুঁজিবাজারে স্থবিরতা বিরাজ করছে। কাঙ্ক্ষিত রিটার্ন না পাওয়ায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে হতাশা বাড়ছে এবং অনেকেই তাদের পোর্টফোলিওতে থাকা সব শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন। এর ফলে চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে (জানুয়ারি-মার্চ) শেয়ার না থাকা বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাবের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।
সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল) সূত্রে জানা গেছে, এই সময়ে শেয়ারশূন্য বিও হিসাব বেড়ে ২৫ হাজার ৩৫৯টিতে পৌঁছেছে।
সিডিবিএলের উপাত্ত অনুযায়ী, গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত শেয়ার না থাকা বিও হিসাবের সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ৪৪ হাজার ৩৮টি, যা চলতি বছরের ২৫ মার্চ শেষে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৬৯ হাজার ৩৯৭টিতে। একই সময়ে শেয়ারধারী বিও হিসাবের সংখ্যাও হ্রাস পেয়েছে। গত বছরের ডিসেম্বর শেষে দেশে মোট ১২ লাখ ৭১ হাজার ৭৫৯টি শেয়ারধারী বিও হিসাব ছিল যা ২৫ মার্চ কমে ১২ লাখ ৫০ হাজার ৯২০টিতে দাঁড়িয়েছে।
যদিও সামগ্রিকভাবে বিও হিসাবের সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে, তবে সেটি মূলত নতুন হিসাব খোলার ফলে হয়েছে। গত ৩১ ডিসেম্বর দেশে মোট বিও হিসাব ছিল ১৬ লাখ ৬৪ হাজার ৯৫৩টি, যা ২৫ মার্চ বেড়ে হয়েছে ১৬ লাখ ৮৮ হাজার ৬৭টি। অর্থাৎ তিন মাসের ব্যবধানে মোট বিও হিসাব বেড়েছে ৫ হাজার ৬১৫টি।
এ সময়ে নারী ও পুরুষ উভয় শ্রেণির বিনিয়োগকারীর সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে। গত বছরের ডিসেম্বরে পুরুষ বিও হিসাবধারীর সংখ্যা ছিল ১২ লাখ ৬১ হাজার ১৯৮টি, যা মার্চ শেষে ১২ লাখ ৬৬ হাজার ১৮টিতে পৌঁছেছে। অপরদিকে নারী বিও হিসাবধারীর সংখ্যা ছিল ৪ লাখ ৩ হাজার ৭৫৫টি, যা ২৫ মার্চ বেড়ে ৪ লাখ ৪ হাজার ৩৮৬টিতে দাঁড়িয়েছে।
তবে স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের সংখ্যা বাড়লেও প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের সংখ্যা কমেছে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে প্রবাসীদের বিও হিসাব ছিল ৪৬ হাজার ৬৯১টি, যা ২৫ মার্চ কমে ৪৬ হাজার ৪৯৪টিতে নেমে এসেছে। অন্যদিকে স্থানীয় বিও হিসাবের সংখ্যা ১৬ লাখ ১৮ হাজার ২৬২টি থেকে বেড়ে ১৬ লাখ ২৩ হাজার ৯১০টিতে পৌঁছেছে।
বাজার বিশ্লেষকদের মতে, চলমান মন্দার কারণে বিনিয়োগকারীরা হতাশ হয়ে পড়েছেন। কেউ কেউ তাদের পুরো পোর্টফোলিও বিক্রি করে বাজার থেকে সরে যাচ্ছেন। আবার অনেক বিও হিসাব মার্জিন ঋণের কারণে ফোর্সড সেলের মুখে পড়েছে যার ফলে শেয়ারশূন্য বিও হিসাবের সংখ্যা বেড়ে চলেছে।
বাজার পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, গত তিন মাসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স স্থবির অবস্থায় ছিল। বছরের শুরুতে ১ জানুয়ারি সূচকটি ছিল ৫ হাজার ২১৮ পয়েন্টে, যা ২৫ মার্চ শেষে সামান্য কমে ৫ হাজার ২১৪ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। এ সময় পুঁজিবাজারে দৈনিক লেনদেনের পরিমাণও ছিল হতাশাজনক। সর্বোচ্চ একদিনের লেনদেন ছিল ৬০৭ কোটি টাকা, আর সর্বনিম্ন লেনদেন নেমে আসে ৩০৭ কোটি টাকায়।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বাজারের এই নিম্নমুখী ধারা যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে সামনে শেয়ার না থাকা বিও হিসাবের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। পুঁজিবাজারকে চাঙ্গা করতে হলে বাজারে আস্থা ফেরানো জরুরি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

