দেশের পুঁজিবাজারে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক স্থবিরতার ছাপ স্পষ্টভাবে পড়তে শুরু করেছে। গত সপ্তাহজুড়ে (৪ থেকে ৮ মে) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) উভয় বাজারেই সূচক পতনের মধ্য দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে। বাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা সংকট, নীতিনির্ধারকদের কার্যকর পদক্ষেপের ঘাটতি এবং বহুমাত্রিক অর্থনৈতিক চাপে শেয়ারবাজারে নেমেছে হতাশার ছায়া।
ডিএসইর সাপ্তাহিক বাজার পর্যালোচনায় দেখা গেছে, বিদায়ী সপ্তাহে দুই বাজার মিলিয়ে বাজার মূলধনের পরিমাণ কমেছে প্রায় ৮ হাজার ৬৫৪ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। শুধু ডিএসইতে মূলধন কমেছে ৪ হাজার ১২৪ কোটি ৮১ লাখ টাকা। সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস ৮ মে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৫২ হাজার ৪৪৪ কোটি ৫৫ লাখ টাকা, যেখানে আগের সপ্তাহে এটি ছিল ৬ লাখ ৫৬ হাজার ৫৬৯ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। একই সময়ে সিএসইর বাজার মূলধনও উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। আগের সপ্তাহের ৬ লাখ ৮৭ হাজার ৭৩১ কোটি ৪৯ লাখ টাকার বিপরীতে বিদায়ী সপ্তাহে তা নেমে এসেছে ৬ লাখ ৮৩ হাজার ২০২ কোটি ১০ লাখ টাকায়। এতে সিএসইতে মূলধন কমেছে ৪ হাজার ৫২৯ কোটি ৩৯ লাখ টাকা।
সূচকের দিক থেকেও পতন ছিল সুস্পষ্ট। ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসই এক্স ১৫ দশমিক ৬৪ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৯০২ পয়েন্টে, যা শতকরা হিসাবে ০.৩২ শতাংশ হ্রাস। ডিএসই-৩০ সূচক কমেছে ২ দশমিক ৪৩ পয়েন্ট (০.১৩ শতাংশ), ডিএসই শরিয়াহ সূচক কমেছে ১৯ দশমিক ৯১ পয়েন্ট (১.৮২ শতাংশ) এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পভিত্তিক ডিএসএমই এক্স সূচক কমেছে ৭ দশমিক ৪৪ পয়েন্ট বা ০.৮১ শতাংশ।
তবে ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণ বেড়েছে। বিদায়ী সপ্তাহে লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ৪১৫ কোটি ৬৩ লাখ টাকা যা আগের সপ্তাহের তুলনায় ১ হাজার ৫ কোটি ৪৮ লাখ টাকা বেশি। সেই তুলনায় সিএসইতে লেনদেন কমে এসেছে। বিদায়ী সপ্তাহে এখানে মোট লেনদেন হয়েছে ৫২ কোটি ৪১ লাখ টাকা, যেখানে আগের সপ্তাহে ছিল ৬৮ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। ফলে সিএসইতে লেনদেন কমেছে ১৬ কোটি ২২ লাখ টাকা।
ডিএসইতে বিদায়ী সপ্তাহে ৩৯৪টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ১৪১টির দর বেড়েছে, ২৩০টির কমেছে এবং ৩৭টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে। ২৩টি কোম্পানির শেয়ার বা ইউনিটে কোনো লেনদেন হয়নি। অন্যদিকে সিএসইতে ৩০৭টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ১১১টির, কমেছে ১৬৮টির এবং ২৮টির দর অপরিবর্তিত ছিল।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বিনিয়োগকারীদের অনিশ্চয়তা কাটিয়ে উঠতে হলে সরকার ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার পক্ষ থেকে কার্যকর এবং আস্থাবান উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি। বাজারের মূলধন ও সূচক পতন ঠেকাতে বাজার ব্যবস্থাপনার দক্ষতা বৃদ্ধি, নীতিগত স্বচ্ছতা এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা এখন সময়ের দাবি। অন্যথায় দীর্ঘমেয়াদে বাজারে নেতিবাচক প্রভাব আরও গভীর হতে পারে।

