বর্তমান প্রযুক্তিনির্ভর জীবনে ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্কের ব্যবহার ব্যাপকভাবে বিস্তৃত। ঘরে, অফিসে, ক্যাফেতে—যেখানেই থাকুন না কেন ওয়াই-ফাই সংযোগ ছাড়া আধুনিক জীবন প্রায় অচল। কিন্তু এই সাশ্রয়ী ও সুবিধাজনক প্রযুক্তি নিয়ে অনেকের মনে এক ধরনের শঙ্কা কাজ করে। অনেকেই মনে করেন, ওয়াই-ফাই সিগন্যাল মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। বিষয়টি নিয়ে দুশ্চিন্তা যেমন রয়েছে তেমনি বিভ্রান্তিও কম নয়।
ওয়াই-ফাই প্রযুক্তি মূলত রেডিও সিগন্যালের মাধ্যমে কাজ করে যা তারবিহীনভাবে কম্পিউটার, ফোন বা অন্যান্য ডিভাইসকে ইন্টারনেটের সঙ্গে যুক্ত করে। এসব সিগন্যালের ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক শক্তি সাধারণত ২ থেকে ৫ গিগাহার্ডজের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। মাইক্রোওয়েভ ওভেনেও একই ধরনের তরঙ্গ ব্যবহার করা হয়। তবে এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হলো, ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্কে ব্যবহৃত ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক তরঙ্গ নন-আয়নাইজিং বিকিরণ তৈরি করে। এর মানে হলো, এই তরঙ্গগুলো এমন কোনো শক্তি বহন করে না যা মানব কোষ বা ডিএনএ ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। তাই বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত যে, ওয়াই-ফাই সিগন্যাল মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য সরাসরি কোনো ঝুঁকি সৃষ্টি করে না।

ওয়াই-ফাই এবং মোবাইল ফোনের মতো ওয়্যারলেস যোগাযোগ প্রযুক্তির সম্ভাব্য দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে গবেষণা চলেছে বহু বছর ধরে। বিশেষত মোবাইল ফোন ব্যবহারের ক্ষেত্রে উদ্বেগ ছিল আরও বেশি। এই প্রেক্ষাপটে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যানসার (আইএআরসি) একটি গবেষণা পরিচালনা করে। “কসমস প্রকল্প” নামে পরিচিত এই দীর্ঘমেয়াদি গবেষণায় প্রায় আড়াই লাখ মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে। গবেষণাটি মূলত মোবাইল ফোন ব্যবহারের কারণে ব্রেন টিউমারের মতো মারাত্মক অসুস্থতা হওয়ার সম্ভাবনা যাচাইয়ের উদ্দেশ্যে করা হয়। গবেষণার ফলাফলে বলা হয়েছে, দীর্ঘ সময় ধরে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীদের মধ্যে ব্রেন টিউমারের ঝুঁকি তুলনামূলক কম সময় ফোন ব্যবহারকারীদের তুলনায় বেশি নয়। অর্থাৎ, সাধারণ মোবাইল ফোন বা ওয়াই-ফাই সিগন্যালের ব্যবহার স্বাস্থ্যের জন্য তেমন কোনো মারাত্মক ঝুঁকির কারণ নয়।
এ বিষয়ে কানাডা সরকারও তাদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে নিশ্চিত করেছে যে, ওয়াই-ফাই সিগন্যাল মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নয়। এটি একটি বিজ্ঞানসম্মত সত্য এবং এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে প্রমাণিত কোনো তথ্য নেই যা ওয়াই-ফাই ব্যবহারের কারণে স্বাস্থ্যের ওপর গুরুতর প্রভাব ফেলার সম্ভাবনা নির্দেশ করে।
তবে এই গবেষণা ও প্রতিবেদন সত্ত্বেও কিছু মানুষের মধ্যে ভিন্নমত থাকতে পারে এবং তাদের উদ্বেগও অমূলক নয়। প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল প্রযুক্তির এই যুগে নতুন নতুন গবেষণা আসতেই পারে। কিন্তু বর্তমান বৈজ্ঞানিক প্রমাণ অনুযায়ী, ওয়াই-ফাই সিগন্যাল বা মোবাইল ফোন ব্যবহারে স্বাস্থ্যের জন্য গুরুতর কোনো ঝুঁকি নেই বলেই নিশ্চিত করা হয়েছে।
সূত্র: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)