২০২৪ সালের তৃতীয় প্রান্তিকে বিশ্ব স্মার্টফোন বাজারে বিক্রির সংখ্যা ছুঁয়েছে নতুন উচ্চতা। ক্যানালিসের সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত বৈশ্বিক স্মার্টফোন বিক্রি ৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় ৩১ কোটি ইউনিটে পৌঁছেছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় উল্লেখযোগ্য। এ বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে স্মার্টফোন বিক্রিতে এই প্রবৃদ্ধি কেবল প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন নয়। বরং ক্রমাগত নতুন মডেলের উন্মোচনের ফল, যা ক্রেতাদের আপগ্রেড করতে উৎসাহিত করেছে।
এই প্রান্তিকেও শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে স্যামসাং, যা ৫ কোটি ৭৫ লাখ স্মার্টফোন বিক্রি করেছে। এন্ট্রি-লেভেল ফোনের বিক্রিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখলেও বাজারের ১৮.৩ শতাংশ হিস্যা নিয়ে স্যামসাং মোট বিক্রির কিছুটা হ্রাস সত্ত্বেও প্রান্তিকের সেরা অবস্থান ধরে রেখেছে। স্যামসাংয়ের গ্যালাক্সি সিরিজে এআই ফিচার এবং নতুন প্রিমিয়াম মডেলগুলোর বাজারে আসা। বিশেষ করে গ্যালাক্সি জেড ফোল্ড সিক্স এবং জেড ফ্লিপ সিক্সের মাধ্যমে ব্র্যান্ডটি প্রিমিয়াম সেগমেন্টে তার প্রভাব আরো জোরদার করেছে।
অ্যাপলও শক্ত অবস্থানে রয়েছে। সেপ্টেম্বরে নতুন আইফোন ১৬ সিরিজ বাজারে আসার পর তৃতীয় প্রান্তিকের শেষে অ্যাপল ৫ কোটি ৪৫ লাখ ইউনিট বিক্রি করে দ্বিতীয় অবস্থানে পৌঁছেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নতুন সিরিজের বেসিক ও প্রো মডেলের মধ্যে ফিচারের পার্থক্য তুলনামূলকভাবে কম থাকায় গ্রাহকদের সাড়া বেশ ইতিবাচক হয়েছে।
তৃতীয় অবস্থানে থাকা চীনা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান শাওমি এ প্রান্তিকে ৪ কোটি ২৮ লাখ স্মার্টফোন বিক্রি করেছে। শাওমির ক্ষেত্রে ব্র্যান্ড স্টোর ব্যবহারের মাধ্যমে ওপেন মার্কেটে মধ্য থেকে উচ্চ মূল্যের পণ্যের বিক্রিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
চতুর্থ ও পঞ্চম অবস্থানে থাকা অপো ও ভিভো যথাক্রমে ২ কোটি ৮৬ লাখ এবং ২ কোটি ৭২ লাখ ইউনিট বিক্রি করেছে। এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে উভয়ের বাজার ইতিবাচক পারফরম্যান্স দেখিয়েছে। বিশেষত, মিড-রেঞ্জ গ্রাহকদের জন্য ভিভোর নতুন ভি৪০ সিরিজের মডেলগুলো বাজারে আনা একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ছিল।
ক্যানালিসের জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক টোবি ঝু বলেন, ‘‘২০২৪ সালের প্রথমার্ধে গ্রাহক চাহিদা ও অর্থনৈতিক উন্নতির ফলেই স্মার্টফোন বিক্রি বেড়েছে। তবে সাশ্রয়ী দামের ফোনের বাজারে এখনো তীব্র প্রতিযোগিতা রয়েছে।’’ উপাদানের দাম বৃদ্ধি লাভজনকতা ও খরচ নিয়ন্ত্রণে কিছুটা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে বলে তিনি উল্লেখ করেন। তার মতে, কোম্পানিগুলো উদীয়মান বাজারের দিকে মনোযোগ দিচ্ছে, যেখানে মধ্য-রেঞ্জের ফোনের বিক্রির সম্ভাবনা তুলনামূলক বেশি।
অন্যদিকে ইন্টারন্যাশনাল ডাটা কর্পোরেশন (আইডিসি) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে বৈশ্বিক স্মার্টফোন বিক্রি ৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৩১ কোটি ৬১ লাখ ইউনিটে পৌঁছেছে। আইডিসির মতে, এ নিয়ে টানা পাঁচ প্রান্তিকে স্মার্টফোন বিক্রিতে ইতিবাচক প্রবণতা বজায় রয়েছে, যা ২০২৪ সালের দ্বিতীয়ার্ধে বাজারের জন্য আশাব্যঞ্জক সূচনা করেছে।
বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে স্মার্টফোনের বিক্রির এ চিত্র নতুন উদ্ভাবন, ব্র্যান্ডগুলোর ক্রমবর্ধমান প্রতিযোগিতা এবং গ্রাহকদের প্রযুক্তি আপগ্রেডের আগ্রহের প্রতিফলন। যা বিশ্বব্যাপী স্মার্টফোন বাজারের অগ্রগতি অব্যাহত রাখবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।