মাত্র ১১ বছর আগে ক্রিসপার প্রযুক্তির আবিষ্কার অবিশ্বাস্য বিষয়টি বাস্তবে রূপ দেয়। ক্রিসপার মূলত একধরনের কাঁচি। ডিএনএ কাটাকুটির কাজটা এই ক্রিসপার দিয়েই করতে হয়। এই ক্রিসপারনির্ভর প্রথম চিকিৎসা অনুমোদন পেয়েছে ২০২৩ সালের শেষদিকে।
যেকোনো প্রাণীর জীবনের নীলনকশা লেখা থাকে যে ডিএনএ-তে, তার একধরনের একক বলা যায় জিনকে। এই জিন বলে দেয় দেহের কার্যকরী একক প্রোটিনগুলো কেমন হবে। তাই যেকোনো রোগ দ্রুত সারিয়ে তোলা সম্ভব জিন সম্পাদনা ও বদলে দেওয়ার মাধ্যমে। খুব সরল করে বললে, ডিএনএর নির্দিষ্ট জায়গায় কেটে, জিন বদলে দিয়ে আবার জুড়ে দিলেই হলো। সেরে যাবে রোগ!
রোগটির নাম সিকল সেল অ্যানিমিয়া। এটা বংশগত রোগ। বেটা-গ্লোবিন নামে একটি জিনে মিউটেশনের ফলে এ রোগ হয়ে থাকে৷ এই জিন রক্তের হিমোগ্লোবিন প্রোটিন তৈরির নির্দেশনা দেয়৷ এতে মিউটেশন হলে হিমোগ্লোবিনের গঠন বদলে যায়। ফলে লোহিত রক্তকণিকার স্বাভাবিক আকার বদলে সিকল বা কাস্তের মতো হয়ে যায়। অনেকটা অর্ধচন্দ্রের মতো। অস্বাভাবিক আকৃতির কারণে এটি আটকে যায় রক্তনালিতে। তখন রক্ত চলাচল বাধাপ্রাপ্ত হয় ও রক্তে অক্সিজেনের অভাব দেখা দেয়৷ ফলে মৃত্যুও হয় অনেকের।
এ রোগ প্রতিকারে এফডিএ ক্রিসপারনির্ভর ‘ক্যাসজেভি’ চিকিৎসা পদ্ধতি অনুমোদন করেছে। এতে মূলত তিনটি জিনিস প্রয়োজন-ক্যাস৯ প্রোটিন, গাইড আরএনএ ও সুস্থ জিন। সিকল সেল অ্যানিমিয়ার ক্ষেত্রে গাইড আরএনএ ব্যবহার করে রোগীর স্টেম কোষে ত্রুটিপূর্ণ বেটা-গ্লোবিন জিন শনাক্ত করে ক্যাস৯ প্রোটিনের আণবিক কাঁচি দিয়ে ছেঁটে ফেলা হয়। পরে সে অংশে বিজ্ঞানীদের সরবরাহকৃত সুস্থ জিন বসালেই হয়ে যায়। এই সুস্থ বেটা-গ্লোবিন জিন হিমোগ্লোবিন তৈরির যে নির্দেশনা দেয়, তার গঠন ঠিক থাকে৷
অনেক রোগীর মতে, এটি জীবন বদলে দেওয়া প্রযুক্তি। এখন চ্যালেঞ্জ হলো, কম খরচে এই চিকিৎসা সবাই যেন নিতে পারে, তা নিশ্চিত করা। সূত্র : বিজ্ঞানচিন্তা