প্রযুক্তির অগ্রযাত্রা বর্তমানে এক অবিশ্বাস্য গতিতে এগিয়ে চলেছে। এই পরিবর্তনের ফলে নতুন নতুন উদ্ভাবন আমাদের জীবনে প্রবেশ করছে, যা ভবিষ্যৎকে আরো আধুনিক ও কার্যকর করে তুলবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, আগামী দিনে তিনটি প্রযুক্তি বিশেষভাবে গুরুত্ব পাবে- কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ও মেশিন লার্নিং, এক্সটেন্ডেড রিয়্যালিটি (এক্সআর) এবং ডিজিটাল ট্রাস্ট।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও মেশিন লার্নিং-
বিশ্বজুড়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ও মেশিন লার্নিং-এর ব্যবহার দ্রুত বাড়ছে। গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও প্রযুক্তি সংস্থাগুলো উন্নত এআই সিস্টেম তৈরিতে বিনিয়োগ করছে, যা ভবিষ্যতে বিভিন্ন খাতে বিপ্লব ঘটাবে। বর্তমানে মেশিন ভিশন প্রযুক্তির মাধ্যমে কম্পিউটার ছবি ও ভিডিও বিশ্লেষণ করতে পারছে। একই সঙ্গে ভাষা প্রক্রিয়াকরণ প্রযুক্তির উন্নতির ফলে এআই এখন মানুষের কথা বুঝতে ও প্রতিক্রিয়া জানাতে সক্ষম।
আগামী দিনে লো-কোড ও নো-কোড প্ল্যাটফর্ম জনপ্রিয় হয়ে উঠবে, যা গ্রাফিক্যাল ইন্টারফেস ব্যবহার করে সহজেই সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টের সুযোগ করে দেবে।
বিশেষজ্ঞদের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৫ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী এআই ও কগনিটিভ সিস্টেমে ব্যয় ৫৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে যাবে এবং এআই শিল্পের বাজার দাঁড়াবে ১৯০ বিলিয়ন ডলারে।
এআই-এর ব্যাপক বিস্তারের ফলে নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। বিশেষ করে সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, প্রোগ্রামিং, সাপোর্ট ও মেইনটেন্যান্স খাতে। বর্তমানে মেশিন লার্নিং ইঞ্জিনিয়ারদের বার্ষিক বেতন ১,২৫,০০০ মার্কিন ডলার থেকে শুরু হয়ে এআই আর্কিটেক্টদের জন্য ১,৪৫,০০০ মার্কিন ডলার পর্যন্ত পৌঁছাচ্ছে।
২০২৫ সালের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এআই ও অটোমেশন প্রযুক্তি ৯ শতাংশ নতুন চাকরির সুযোগ সৃষ্টি করবে- যার মধ্যে রোবট মনিটরিং, ডেটা সায়েন্টিস্ট, অটোমেশন স্পেশালিস্ট এবং কন্টেন্ট কিউরেটরের মতো পদ অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
এক্সটেন্ডেড রিয়্যালিটি (এক্সআর)-
এক্সটেন্ডেড রিয়্যালিটি (এক্সআর) হল ভার্চুয়াল রিয়্যালিটি (ভিআর), অগমেন্টেড রিয়্যালিটি (এআর) ও মিক্সড রিয়্যালিটির (এমআর) সমন্বিত রূপ। একসময় এটি কেবল গেমিং-এর জন্য ব্যবহৃত হলেও বর্তমানে এটি ব্যবসা, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং খুচরা বিক্রয় খাতে ব্যবহৃত হচ্ছে।
ভোক্তারা এখন কেনাকাটার আগে এক্সআর প্রযুক্তির মাধ্যমে নির্ধারণ করতে পারেন যে নির্দিষ্ট পণ্য তাদের জন্য কতটা উপযোগী হবে।
উদাহরণস্বরূপ, একজন ক্রেতা তার বসার ঘরে একটি ডিজিটাল সোফার মডেল বসিয়ে দেখতে পারবেন সেটি কতটা মানানসই হবে।
ভবিষ্যতে এক্সআর প্রযুক্তি আরও নিখুঁত ও বাস্তবসম্মত অভিজ্ঞতা দেবে। যা গ্রাহক ও ব্যবসার জন্য নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করবে। প্রতিষ্ঠানগুলোর এখনই এই প্রযুক্তির সুবিধা গ্রহণের পরিকল্পনা করা উচিত, যাতে তারা আরও উন্নত গ্রাহকসেবা দিতে সক্ষম হয়।
ডিজিটাল ট্রাস্ট-
ডিজিটাল ট্রাস্ট বলতে বোঝায় নিরাপদ ও বিশ্বাসযোগ্য ডিজিটাল লেনদেনের পরিবেশ। যেখানে প্রযুক্তির ওপর ব্যবহারকারীদের আস্থা নিশ্চিত করা হয়। ব্লকচেইন এবং ডিস্ট্রিবিউটেড লেজার টেকনোলজি (ডিএলটি) ডিজিটাল ট্রাস্ট বৃদ্ধির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
সংস্থাগুলোকে এখন অ্যাক্সেস শেয়ারিংয়ের মাধ্যমে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। ব্লকচেইন প্রযুক্তির উন্নয়নের মাধ্যমে ব্যবসায়িক লেনদেন আরও স্বচ্ছ ও নিরাপদ হবে, যা নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দেবে।
প্রযুক্তি ও ডিভাইসের প্রতি মানুষের নির্ভরতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ডিজিটাল ট্রাস্টও বাড়ছে। এটি ভবিষ্যতে নতুন নতুন উদ্ভাবনের পথ সুগম করবে এবং প্রযুক্তির নিরাপত্তা ও নির্ভরযোগ্যতা আরও শক্তিশালী করবে।
ডিজিটাল ট্রাস্টের দুটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হলো সাইবার নিরাপত্তা ও এথিকাল হ্যাকিং। এ দুটি ক্ষেত্রে জুনিয়র থেকে সিনিয়র লেভেল পর্যন্ত কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হচ্ছে এবং ভবিষ্যতে আরও বাড়বে। প্রযুক্তির এই অগ্রযাত্রার মধ্য দিয়ে নতুন উদ্ভাবন ও নতুন প্রজন্মের আবির্ভাব ঘটবে- যা আধুনিক বিশ্বের উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখবে।