নারীদের গণপরিবহনে যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে চালু হলো ‘HELP’ (Harassment Elimination Literacy Program) অ্যাপ। রাজধানীর দ্য ডেইলি স্টার সেন্টারে শনিবার (১৬ মার্চ) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে অ্যাপটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। যৌথভাবে অ্যাপটি তৈরি করেছে ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টার (বিজেসি) ও সুইচ বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সহায়তা দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থায়নে ফ্রি প্রেস আনলিমিটেড ও আর্টিকেল নাইনটিন।
পাইলট প্রকল্প হিসেবে শুরুতে HELP অ্যাপটি মোহাম্মদপুর-বসিলা থেকে সায়েদাবাদ রুটে চলাচলকারী গণপরিবহনে পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হবে। যেকোনো যৌন হয়রানির ঘটনা এই অ্যাপের মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে রিপোর্ট করা যাবে। অ্যাপের ‘এলার্ট’ অপশন চাপলে ভুক্তভোগীর তাৎক্ষণিক অবস্থান (রিয়েল টাইম লোকেশন) স্বেচ্ছাসেবকদের কাছে পৌঁছে যাবে। প্রয়োজনে ব্যবহারকারী সরাসরি নিকটবর্তী থানায় কিংবা জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন করতে পারবেন।
অ্যাপে রিপোর্ট জমা রাখার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে, যা পরবর্তীতে আইনি সহায়তার জন্য ব্যবহার করা যাবে। ভুক্তভোগীরা চাইলে পরিচয় গোপন রেখেও অভিযোগ করতে পারবেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী। তিনি বলেন, গণপরিবহনে নারীদের যৌন হয়রানির ঘটনা দুর্ভাগ্যজনকভাবে বেড়েই চলেছে। বাস্তবে ঘটে যাওয়া ঘটনার তুলনায় মিডিয়ায় উঠে আসে অল্প কিছু। অনেকেই সামাজিক বাধার কারণে বিষয়গুলো প্রকাশ করতে চান না।
তিনি বলেন, HELP অ্যাপ থেকে থানায় সরাসরি রিপোর্ট পাঠানোর সুবিধা থাকলে সেটি এফআইআর হিসেবে গ্রহণ করা যেতে পারে। এতে পুলিশ চাইলে নিজ উদ্যোগে মামলা নিয়ে তদন্ত শুরু করতে পারবে। প্রয়োজনে ডিএমপি এই উদ্যোগে সহায়তা দেবে বলেও জানান তিনি।
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্যে মহিলা পরিষদের সভাপতি ফৌজিয়া মোসলেম বলেন, একজন নারী ধর্ষণের শিকার হলে আসলে পুরো সমাজই ধর্ষিত হয়। নারী অধিকার ও লিঙ্গবৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সাংবাদিকদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি আরও বলেন, এই অ্যাপের মাধ্যমে কমিউনিটি ও সমাজের সবাইকে সম্পৃক্ত করা সম্ভব হবে। নারী নির্যাতন রোধে এরকম উদ্যোগকে মহিলা পরিষদ পাশে থাকবে।
বিজেসির সদস্য সচিব ইলিয়াস হোসেন বলেন, নারীরা যেভাবে প্রতিনিয়ত যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন, তা উদ্বেগজনক। আমরা শুধু প্রতিবাদ নয়, সমস্যার একটি বাস্তবসম্মত সমাধান দেওয়ার চেষ্টা করেছি এই অ্যাপের মাধ্যমে।
HELP প্রকল্পের আওতায় চলাচলকারী বাসে QR কোড সংযুক্ত করা হবে, যাতে যাত্রীরা দ্রুত অ্যাপে প্রবেশ করে সহায়তা চাইতে পারেন। পাশাপাশি স্কুল-কলেজে স্বেচ্ছাসেবক দল গঠনের পরিকল্পনা রয়েছে, যারা জরুরি মুহূর্তে সহযোগিতা করবেন।
সুইচ বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক মাইনুল আহসান ফয়সাল জানান, এটি এখন পাইলট প্রজেক্ট হলেও ভবিষ্যতে এর আওতা বাড়িয়ে সারাদেশে ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। পরিবহন মালিক সমিতির সঙ্গেও এ বিষয়ে আলোচনা চলছে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিজেসির চেয়ারম্যান রেজওয়ানুল হক এবং সঞ্চালনা করেন বিজেসির নির্বাহী শাহনাজ শারমীন।