চট্টগ্রাম নগরের পশ্চিম খুলশী এলাকার রূপসী পাহাড় কেটে গড়ে উঠেছে প্লট। প্রায় ৪০ ফুট উঁচু পাহাড়টির খাঁজে এবং পাদদেশে পাহাড় কেটে গড়ে উঠছে অন্তত আটটি প্লট। রূপসী পাহাড়টির অবস্থান পশ্চিম খুলশীর কাঁঠালবাগান ও বরইবাগান এলাকায়। পশ্চিম খুলশীর বরইবাগান এলাকায় রূপসী পাহাড় ক্ষতবিক্ষত করে এভাবে প্লট-বাণিজ্য চললেও তা দেখার যেন কেউ নেই।
পাহাড়টির বরইবাগান এলাকার খাঁজে এবং নিচে স্থানে স্থানে গড়ে উঠেছে অস্থায়ী স্থাপনা। এসব স্থাপনায় মালিক বা দখলদারদের প্রতিনিধিরা বসবাস করেন। তাঁদের একজন বলেন, এখানে প্লট তৈরি করে তা বিক্রি করা হয়। সব সময় নতুন নতুন মালিক পরিবর্তন হয়।
গত এক বছরে (জুন পর্যন্ত) পাহাড় কাটার অভিযোগে পরিবেশ অধিদপ্তর, চট্টগ্রাম মামলা করেছে ১২টি। তার আগের বছর অর্থাৎ ২০২২-২৩ সালে মামলা হয়েছিল ২২টি। ২০ বছরে মোট মামলা হয় শতাধিক। আকবরশাহ, বায়েজিদ, খুলশী, বেলতলীঘোনাসহ বিভিন্ন এলাকায় পাহাড় কাটা চলছে। পাহাড় কাটার অনেক ঘটনা অগোচরে থেকে যায়।
পাহাড়টির নিচে প্রায় ২০ ফুট চওড়া পাকা সড়ক হয়ে গেছে। এ কারণে প্লটের দামও বেড়েছে বলে স্থানীয়দের অভিমত। প্রতি কাঠা ২০ থেকে ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয় বলে জানান তাঁরা। কিন্তু কারা এই প্লট তৈরি করছে, কারা বিক্রি করছে- এসব বিষয়ে মুখ খুলতে নারাজ স্থানীয় লোকজন।
পশ্চিম খুলশীর যেখানে প্লট নির্মাণ করা হচ্ছে, তার একটু দূরে অপর একটি স্থাপনায় গতকাল নোটিশ দিয়ে এসেছে পরিবেশ অধিদপ্তর। টিন দিয়ে ঘেরাও দিয়ে পাহাড়ি এই জায়গায় আইটিএসএস বৌদ্ধবিহার ও ভাবনা কেন্দ্র নামে একটি প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড। তাদের নোটিশ দেওয়া হয়।
পরিবেশ অধিদপ্তর মহানগরের জ্যেষ্ঠ রসায়নবিদ রুবায়েত তাহরীম সৌরভ বলেন, এই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে একটা অভিযোগ এসেছে। সেটা পরিদর্শন করে নোটিশ দেওয়া হয়। এর পাশে পাহাড়ের পাদদেশে প্লট তৈরির বিষয়টিও তাঁর চোখে পড়েছে। বললেন, ‘আমরা প্রাথমিকভাবে খোঁজ নিয়ে জেনেছি এগুলোর শ্রেণি “শণখোলা”। পাহাড় ও টিলা শ্রেণি হলে আমরা ত্বরিত ব্যবস্থা নিতে পারি। শণখোলার ক্ষেত্রে ভূমি কার্যালয়কে আমরা বিষয়টি অবহিত করি।’
জানা যায়, শণখোলার ক্ষেত্রে পরিবেশ আইনে ব্যবস্থা নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তবে দৃশ্যমান পাহাড়ের ক্ষেত্রে শণখোলা শ্রেণি হলেও ব্যবস্থা নেওয়ার মৌখিক নির্দেশনা রয়েছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) চট্টগ্রামের সমন্বয়কারী মনিরা পারভীন বলেন, ‘নগরের বেশ কিছু জায়গায় পাহাড় কাটার অভিযোগ পাচ্ছি। আমরা অভিযোগ শুনলেই সরেজমিনে পরিদর্শন করে প্রশাসনকে অবহিত করি। এ ছাড়া আকবরশাহ এলাকায় পাহাড় কাটা বন্ধে গত সোমবার পাহাড়ের মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। পশ্চিম খুলশীতেও একইভাবে বৈঠক করার কথা রয়েছে।’
বরইবাগান এলাকায় নয়, পশ্চিম খুলশীর কাঁঠালবাগান, বরইবাগান, মাজার রোডসহ বিভিন্ন স্থানে পাহাড় কেটে চলছে প্লট-বাণিজ্য। পাহাড় কেটে সীমানাদেয়াল নির্মাণ করে গড়ে তোলা হচ্ছে বিভিন্ন প্লট। এখানে কৃষ্ণচূড়া আবাসিক এলাকা, পাহাড়িকা আবাসিক এলাকা, মুক্তিযোদ্ধা আবাসিক এলাকাসহ বিভিন্ন কলোনি গড়ে উঠেছে।