বাংলা ভাষায় চিকিৎসাবিজ্ঞানকে সহজবোধ্য ও জনপ্রিয় করে তুলতে যে কজন বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন, তাঁদের অন্যতম অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরী। চিকিৎসাবিজ্ঞান বিষয়ে বাংলায় ধারাবাহিক লেখালেখির জন্য তিনি ছিলেন অনন্য। জটিল স্বাস্থ্য বিষয়কে সাধারণ মানুষের কাছে সহজভাবে পৌঁছে দেওয়ার জন্য চিকিৎসকদের অনেকেই তাঁর পরামর্শ নিতেন।
গতকাল শুক্রবার বিকেলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মিল্টন হলে এক স্মরণসভায় তাঁর অবদানের কথা তুলে ধরেন চিকিৎসক, স্বজন ও সহকর্মীরা।
শুভাগত চৌধুরীর ভাই ও চিকিৎসক অরূপ রতন চৌধুরী স্মরণসভায় বলেন, “স্বাস্থ্যের জটিল বিষয়গুলো সাধারণ মানুষের জন্য সহজ করে উপস্থাপন করা এক ধরনের শিল্প। সেই কাজটিই দক্ষতার সঙ্গে করে গেছেন শুভাগত। তাঁর বাংলা লেখাগুলো স্বাস্থ্য বিষয়ক জ্ঞানে নতুন মাত্রা যোগ করেছিল।”
ভাইয়ের স্মৃতিচারণ শেষে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘তুমি রবে নীরবে হৃদয়ে মম’ গানটি গেয়ে শোনান অরূপ রতন চৌধুরী। এ সময় অনুষ্ঠানে উপস্থিত অনেকেই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।
স্মরণসভায় সরকারের নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সদস্য হালিদা হানুম আখতার বলেন, “শুভাগত চৌধুরী ছিলেন সদা হাস্যোজ্জ্বল ও মানবিক। তিনি সবার সঙ্গে ভালোবাসার জায়গা থেকে কথা বলতেন, যা তাঁকে আরও আপন করে তুলেছিল।”
হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসপাতালের চেয়ারম্যান লেলিন চৌধুরী বলেন, “বাংলা ভাষায় চিকিৎসাবিজ্ঞান নিয়ে লেখালেখির পথিকৃৎ ছিলেন শুভাগত চৌধুরী। আমরা চিকিৎসাবিজ্ঞানের পরিভাষা ও নতুন বাংলা শব্দ নিয়ে আলোচনা করতে তাঁর কাছে যেতাম।”
স্মরণসভায় অনলাইনে যুক্ত হয়ে হারমনি ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা অমিতাভ ভট্টাচার্য বলেন, “বাংলা ভাষায় স্বাস্থ্য বিষয়ক লেখালেখির অন্যতম পথিকৃৎ ছিলেন শুভাগত চৌধুরী। তিনি চিকিৎসাবিজ্ঞানকে শুধু পেশাগত দৃষ্টিকোণ থেকে নয়, দার্শনিকের প্রজ্ঞা নিয়ে দেখতেন।”
ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক মনীন্দ্র নাথ রায় বলেন, “শুভাগত চৌধুরী জটিল বিষয়কে সহজ, প্রাণবন্ত ভাষায় উপস্থাপন করতে পারতেন। এ দক্ষতাই তাঁকে সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তুলেছিল।”
শুভাগত চৌধুরীর স্ত্রী কামনা চৌধুরী বলেন, “উনি আমাদের মাঝ থেকে চলে গেছেন কিন্তু আমার ও অসংখ্য মানুষের হৃদয়ে তিনি চিরকাল থাকবেন।”
মেয়ে সুস্মিতা চৌধুরী বলেন, “আমার বাবা শিখিয়েছেন কীভাবে জীবনকে উদ্যাপন করতে হয়। ভালোবাসা দিয়ে তিনি কর্মজীবন ও পারিবারিক জীবনের অনেক কঠিন সমাধান খুঁজে পেয়েছেন।”
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন জনস্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞ আবু জামিল ফয়সাল। তিনি বলেন, “ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার পরও শুভাগত চৌধুরী সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করেই আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। তিনি পদ-পদবির চিন্তা করতেন না, সবসময় মানুষের জন্য কাজ করতে চেয়েছেন। তিনি বলতেন, ‘যদি পদ-পদবি নেই, তাহলে আমি স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারব না।'”
স্মরণসভায় আরও বক্তব্য দেন অধ্যাপক মাহফুজা খানম, চিকিৎসক মারুফি খানম, অধ্যাপক সৈয়দ আব্দুল হামিদ, সেন্টার ফর ক্যানসার কেয়ার ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক জাহান ই গুলশান প্রমুখ।
অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরীর অবদান বাংলা ভাষায় চিকিৎসাবিজ্ঞানকে সহজলভ্য করার ক্ষেত্রে এক অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। তাঁর লেখা ও কাজের মধ্য দিয়েই তিনি মানুষের হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন।