আজ ১৮ মার্চ, আবুল মনসুর আহমদের ৪৬তম মৃত্যুবার্ষিকী। তিনি ১৯৭৯ সালের এই দিনে ঢাকায় মারা যান। তার জন্ম ১৮৯৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর, ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশাল উপজেলার ধানীখোলা গ্রামে।
আবুল মনসুর আহমদ ছিলেন একজন সাহিত্যিক, সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ এবং আইনজ্ঞ। তিনি বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্রূপাত্মক রচয়িতা। তিনি ১৯৪৬ সালে কলকাতা থেকে প্রকাশিত ‘কৃষক’, ‘নবযুগ’ এবং ‘ইত্তেহাদ’ পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। তিনি আধুনিক সাংবাদিকতার অগ্রপথিক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন।
রাজনীতিতেও তিনি ছিলেন সফল। তিনি শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের নেতৃত্বে যুক্তফ্রন্ট সরকারের প্রাদেশিক শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন। পরে ১৯৫৭ সালে তিনি প্রধানমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর আওয়ামী লীগ সরকারের কেন্দ্রীয় বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী হন।
পূর্ববাংলার স্বার্থে তার অবদান ছিল অনস্বীকার্য। তিনি শিল্পায়নসহ নানা উন্নয়নমূলক উদ্যোগের জন্য খ্যাতি লাভ করেন। তার লেখায় রয়েছে ‘আয়না’, ‘আসমানী পর্দা’, ‘গালিভারের সফরনামা’ এবং ‘ফুড কনফারেন্স’। তিনি ‘বাংলাদেশের কালচার’ বইটি লিখেছেন, যা বাংলার সামাজিক ও রাজনৈতিক ইতিহাসের উপর অনবদ্য রচনা। তার আত্মজীবনীমূলক দুটি বই রয়েছে—’আত্মকথা’ এবং ‘আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর’।
আবুল মনসুর আহমদ চল্লিশ, পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার পক্ষে ব্যাপক প্রচারণা চালিয়েছিলেন। পাকিস্তানের শুরুর দিকে বিরোধী আন্দোলনে তার ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। তিনি ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রথম সারির নেতা। ভাষা আন্দোলনে তিনি ‘ইত্তেহাদ’ সম্পাদক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন।
১৯৪৩ সালেই তিনি পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা নিয়ে লেখালেখি শুরু করেন। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে তিনি যুক্তফ্রন্টের ‘একুশ দফা’ রচনা করেন। এই ইশতেহারের মাধ্যমে শেরেবাংলা ফজলুল হক, মাওলানা ভাসানী ও শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে মুসলিম লীগকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করা হয়।
যুক্তফ্রন্টের ‘২১ দফা’ ছিল তদানীন্তন পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলের বাঙালির রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক দাবির প্রথম পূর্ণাঙ্গ উপস্থাপন। তার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের কারণে তাকে সামরিক শাসক জেনারেল আইয়ুব খানের শাসনামলে বেশ কয়েকবার কারাবরণ করতে হয়েছিল।
বাংলা একাডেমি থেকে আবুল মনসুর আহমদের রচনাবলী প্রকাশিত হয়েছে। এই রচনাবলী চতুর্থ খণ্ড পর্যন্ত সুলভ মূল্যে পাওয়া যাচ্ছে।