ঢাকার আকাশে সারা বছর ধুলোর আস্তরণ। নিঃশ্বাসে বিষ। সেই দূষণ ঠেকাতে এবার এয়ার পিউরিফায়ার বসানোর উদ্যোগ নিচ্ছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। শুরুতে বসানো হবে ৩০টি যন্ত্র। ব্যস্ত এলাকাগুলোতেই প্রথমে স্থাপন করা হবে এসব পিউরিফায়ার।
তবে এই প্রকল্প ঘিরে উঠেছে নানা প্রশ্ন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটা স্থায়ী কোনো সমাধান নয়। এমনকি এর কার্যকারিতা নিয়েও রয়েছে সংশয়।
ডিএনসিসির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ জানিয়েছেন, বিদেশি একটি দাতা সংস্থা ও একটি প্রতিষ্ঠানের সিএসআর তহবিল থেকে এ প্রকল্পের অর্থ আসছে। বিনিময়ে যন্ত্রগুলোর গায়ে থাকবে স্পন্সর প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন।
প্রতিটি পিউরিফায়ারের দাম প্রায় ৫০ থেকে ৬০ লাখ টাকা। প্রশাসকের দাবি, একটি ডিভাইস ৮০টি গাছের সমান কাজ করবে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, এসব যন্ত্র বসানো হবে পরীক্ষামূলকভাবে। ফল ভালো হলে বাড়ানো হবে পরিধি। বিদ্যুৎ ছাড়া অন্য খরচ ডিএনসিসির নয়।
বিশেষজ্ঞদের আপত্তি
এখানেই আপত্তি তুলছেন পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “এত বড় শহরে এমন যন্ত্র বসিয়ে ফল পাওয়া যাবে না। এটা সমস্যার মূল জায়গায় না গিয়ে পাশ কাটানো।”
তার মতে, এই যন্ত্র কেবল আশেপাশের ১০-২০ ফুট এলাকার বাতাসে সামান্য প্রভাব ফেলতে পারে। ঢাকার মতো বাতাস চলাচলকারী শহরে এর কার্যকারিতা প্রায় নেই বললেই চলে।
তিনি আরও বলেন, “আমরা গবেষণায় দেখেছি, ঢাকার বাতাসে সবচেয়ে বেশি আছে নির্মাণকাজের সিলিকন ধুলা। তারপরে যানবাহনের ধোঁয়া, ইটভাটা ও চাকার ঘর্ষণ থেকেও দূষণ বাড়ছে।”
ঢাকার বায়ু কতটা বিপজ্জনক?
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, প্রতিটি ঘনমিটারে পিএম২.৫ এর মাত্রা ৫ মাইক্রোগ্রামের বেশি হওয়া ঠিক নয়। অথচ ২০২৩ সালে ঢাকায় ছিল ৯২ মাইক্রোগ্রাম—নির্ধারিত সীমার প্রায় ১৮ গুণ বেশি।
বিশ্বব্যাংকের তথ্য বলছে, বাংলাদেশের দুই-তৃতীয়াংশ দূষণ ঢাকাতেই তৈরি হয়। সবচেয়ে বেশি দূষণ হয় রান্নার কাজে ব্যবহৃত জ্বালানির ধোঁয়া থেকে—২৮ শতাংশ। এরপর আছে বিদ্যুৎকেন্দ্র, ইটভাটা, বর্জ্য পোড়ানো, রাস্তার ধুলা ও যানবাহনের ধোঁয়া।
ভারতেও হয়নি সুফল
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সভাপতি আদিল মোহাম্মদ খান বলেন, “ভারত দিল্লিতে এমন যন্ত্র বসিয়েছিল। কিন্তু বাতাস তো এক জায়গায় থাকে না। তাই তেমন সুফল মেলেনি।”
তার ভাষায়, ঢাকার দূষণের মাত্রা এতটাই বেশি যে, এ ধরনের উদ্যোগে ফল পাওয়া কঠিন। বরং দীর্ঘমেয়াদি সমাধানে গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
ডিএনসিসির অবস্থান
তবে ডিএনসিসি প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বলছেন, “আমরা নিজেরা অর্থ ব্যয় করছি না। যদি কাজ না করে, তাহলে এই উদ্যোগ বন্ধ করে দেব।”
তিনি আরও জানান, সরকারি অনেক ঠিকাদার নির্মাণস্থলে যথাযথ ব্যবস্থা না নেওয়ায় দূষণ বাড়ছে। এ বিষয়ে এবার কঠোর হচ্ছে সিটি করপোরেশন।