ছয় বছর পেরিয়ে গেলেও আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত হতে পারছে না নীলফামারীর সৈয়দপুর বিমানবন্দর। নেপাল ও ভুটানের আগ্রহে ২০১৯ সালে প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। নির্ধারিত হয় ৯১২ একর জমি অধিগ্রহণের পরিকল্পনা। দেওয়া হয় ৪ ধারার নোটিশও। কিন্তু এত দিনেও প্রকল্পে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই। জমির মালিকরা পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে। জমি বিক্রিও করতে পারছেন না, আবার পাচ্ছেন না কোনো ক্ষতিপূরণ।
ঢাকা থেকে মাত্র ২৬০ কিলোমিটার দূরে সৈয়দপুর বিমানবন্দরে পৌঁছাতে সময় লাগে মাত্র ৪৮ মিনিট। বর্তমানে এটি একটি অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দর হলেও এর ভৌগোলিক অবস্থান আন্তর্জাতিক সংযোগের জন্য অত্যন্ত উপযুক্ত। নেপাল ও ভুটান এই বিমানবন্দর ব্যবহার করতে চায় তাদের পাহাড়ি অঞ্চলের ঝুঁকিপূর্ণ এয়ারপোর্টের বিকল্প হিসেবে।
২০১৯ সালের ৮ এপ্রিল প্রকল্প এলাকার সীমানা নির্ধারণ ও জরিপের কাজ শুরু হয়। ১১ জুলাই জরিপ শেষ করে জেলা প্রশাসন। এরপর জমির মালিকদের কাছে পাঠানো হয় ৪ ধারার নোটিশ। কিন্তু অর্থ বরাদ্দ না থাকায় জমি অধিগ্রহণ থেমে যায় সেখানেই।
নেপাল ও ভুটানের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দল ২০২০ ও ২০২২ সালে বাংলাদেশ সফরে এসে এই বিমানবন্দর ব্যবহার নিয়ে আগ্রহ জানায়। এরপর ২০২৩ সালে ভারত জানিয়ে দেয়, তারা এই প্রকল্পে অর্থায়ন করবে না। এতে প্রকল্পটি পড়ে যায় অনিশ্চয়তায়। পরে ২০২৪ সালে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আবার প্রকল্পটি চালুর ঘোষণা দেয়।
২০২৪ সালের ১২ সেপ্টেম্বর বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া পরিদর্শনে আসেন সৈয়দপুর। তবে সাত মাস পার হলেও বাস্তবায়নে অগ্রগতি নেই।
বর্তমানে বিমানবন্দরের জমির পরিমাণ ১৩৬ দশমিক ৫৯ একর। নতুন করে অধিগ্রহণ করতে হবে আরও ৯১২ দশমিক ৯০ একর জমি। এর মধ্যে ৫৯৫ দশমিক ১৩ একর পড়ছে সৈয়দপুরে এবং ৩১৭ দশমিক ৭৭ একর পার্বতীপুর এলাকায়। অধিগ্রহণের জন্য জমির মালিকদের নোটিশ দেওয়া হলেও এখনও মিলেনি কোনো টাকা।
ফলে জমি বিক্রি বন্ধ। কেউ জমি কিনতেও চাচ্ছে না। জমির মালিকরা পড়েছেন চরম বিপাকে।
বিমানবন্দর এলাকার বাসিন্দা জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘সাত বছর হয়ে গেল, জমির দাম পেলাম না। আবার বিক্রিও করতে পারছি না। স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য টাকা দরকার কিন্তু কিছুই করতে পারছি না।’
বেবিচক চেয়ারম্যান জানান, জমি অধিগ্রহণে লাগবে সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা। অবকাঠামোগত উন্নয়নে আরও ৫ হাজার কোটি। সব মিলিয়ে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প। প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ে। বরাদ্দ পেলেই কাজ শুরু হবে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামান বলেন, আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হলে এই অঞ্চলের অর্থনীতি ও যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিশাল পরিবর্তন আসবে। নেপাল, ভুটান ও ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে সংযোগ তৈরি হবে। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সুযোগও বাড়বে।
তবে বেবিচকের প্রকৌশল বিভাগ বলছে, বরাদ্দ পেলেও জমি অধিগ্রহণ ও টেন্ডারসহ প্রাথমিক কাজেই লাগবে দেড় থেকে দুই বছর। এরপর অবকাঠামো নির্মাণে আরও তিন-চার বছর।
আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের স্বপ্ন দেখছে উত্তরাঞ্চল। কিন্তু বরাদ্দ আর বাস্তবায়নের অভাবে সেই স্বপ্ন দিনের পর দিন ঝুলে আছে।