বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর মধ্যে ফোনালাপ হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় (বাংলাদেশ সময়) এই ফোনালাপ অনুষ্ঠিত হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং।
প্রায় ১৫ মিনিটের ফোনালাপে দুই নেতা আন্তরিক, বন্ধুত্বপূর্ণ ও গঠনমূলক আলোচনা করেছেন। এতে দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কের প্রতিফলন উঠে আসে।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক ও নিরাপত্তা ইস্যু
ফোনালাপ শেষে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস জানান, রুবিও ও ইউনূস দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক গভীর করার পাশাপাশি ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা জোরদারে একসঙ্গে কাজ করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং আরও জানায়, ফোনকলে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য, সংস্কার প্রক্রিয়া, গণতান্ত্রিক রূপান্তর, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন এবং রোহিঙ্গা সংকটসহ পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
রুবিও বাংলাদেশের চলমান সংস্কার উদ্যোগ ও ২০২৬ সালের শুরুর দিকে নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতিকে স্বাগত জানান।
বাণিজ্য ও শুল্ক আলোচনা
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানি বাজার এবং রেমিট্যান্স উৎস যুক্তরাষ্ট্র। এ প্রসঙ্গ টেনে উভয় নেতা শিগগিরই শুল্ক আলোচনার সমাপ্তি এবং দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য আরও সম্প্রসারণের আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
ড. ইউনূস উল্লেখ করেন, সম্প্রতি জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান ওয়াশিংটনে মার্কিন উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস্টোফার ল্যান্ডাউয়ের সঙ্গে সফল বৈঠক করেছেন। সেখানে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও দৃঢ় করার অঙ্গীকার করা হয়।
এছাড়া, বাংলাদেশের ওপর আরোপিত শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানান ড. ইউনূস। তিনি বলেন, “আমরা একটি উদ্যোগ প্যাকেজ চূড়ান্ত করতে কাজ করছি, যা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বাণিজ্য লক্ষ্য পূরণে কার্যকর জবাব হবে।”
নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক রূপান্তর
ফোনালাপে ড. ইউনূস জানান, “২০২৬ সালের শুরুতেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।” তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে চলমান সংলাপ থেকেই প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক সংস্কারগুলো উঠে আসবে।
তিনি আরও বলেন, “নির্বাচন কমিশন বর্তমানে নির্বাচনী ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে কাজ করছে। আগের সরকার এ ব্যবস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছিল। এবারের নির্বাচনে দেশের বহু তরুণ-তরুণী জীবনে প্রথমবারের মতো ভোট দেবে।”
রোহিঙ্গা সংকট ও ভূরাজনীতি
রোহিঙ্গাদের প্রতি ওয়াশিংটনের অব্যাহত সমর্থনের প্রশংসা করেন ড. ইউনূস। তিনি বলেন, “২০১৭ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র সর্বোচ্চ মানবিক সহায়তা দিয়ে আসছে। এখন বাস্তবসম্মত সমাধান ও প্রত্যাবাসনের সম্ভাবনা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি।”
ফোনালাপে ভূরাজনৈতিক প্রসঙ্গও উঠে আসে। ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে স্থিতিশীলতা বজায় রাখা এবং প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের বিষয়েও আলোচনা হয়।
সফরের আমন্ত্রণ
ড. ইউনূস মার্কো রুবিওকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান, যাতে আসন্ন নির্বাচন ও রাজনৈতিক পরিবেশ তিনি সরেজমিনে পরিদর্শন করতে পারেন। তিনি বলেন, “এটি দেশের তরুণদের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে উঠবে।”