আন্দোলনে প্রাণ হারানো কিশোর আব্দুল্লাহ বিন জাহিদের মা ফাতেমা তুজ জোহরা অভিযোগ করেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার বা উপদেষ্টারা তার পরিবারের খোঁজ না নিয়েই ক্ষমতার আসনে বসেছেন। তিনি বলেন, জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহকে ১০০ বার ফোন দিলেও তারা রিসিভ করেননি।
মঙ্গলবার (১ জুলাই) বিকালে রাজধানীর চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে বিএনপি আয়োজিত ‘গণ-অভ্যুত্থান ২০২৪- জাতীয় ঐক্য ও গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় কান্নাজড়িত কণ্ঠে এসব কথা বলেন তিনি।
উপেক্ষার অভিযোগ তুলে হৃদয়বিদারক বর্ণনা-
তিনি বলেন, “এই উপদেষ্টা আর অন্তর্বর্তী সরকার আজও আমাদের খোঁজ নেয়নি। আমার ছেলের রক্তের বিনিময়ে আপনারা ক্ষমতায় গেছেন কিন্তু একবারও আমাদের খবর নিলেন না। সারজিস আর হাসনাতকে আমরা ১০০টা ফোন দিয়েছি, একটা রিসিভও করেননি।”
তিনি আরো বলেন, “আমার বড় ছেলে আব্দুল্লাহ মারা যাওয়ার ১৪ দিনের মাথায় ছোট ছেলের ক্যানসার ধরা পড়ে। সে এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ১৮ মে আমার স্বামী ব্রেন স্ট্রোকে মারা যান। এখন আমার ছোট ছেলের আরেকটি অপারেশন হতে যাচ্ছে।”
বিএনপির পাশে থাকার প্রশংসা-
ফাতেমা তুজ জোহরা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে বলেন, “এই দুঃসময়ে বিএনপি আমাদের পাশে থেকেছে। ছোট ছেলের চিকিৎসার খরচ বহন করেছে। বিএনপি পরিবার না থাকলে আজ আমার ছেলেটাকেও বাঁচাতে পারতাম না। আমাদের হয়তো রাস্তায় এসে দাঁড়াতে হতো।”
তিনি সবার প্রতি অনুরোধ জানান, “আমার শেষ আশাটুকু আমার ছোট ছেলে- তার জন্য দোয়া করবেন। শুক্রবার তার আরেকটি বড় অপারেশন রয়েছে।”
সভায় বিএনপি নেতাদের উপস্থিতি-
বিএনপির এই আলোচনা সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। সভায় সভাপতিত্ব করেন রুহুল কবির রিজভী। উপস্থিত ছিলেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমেদ, এজেডএম জাহিদ হোসেনসহ আরো অনেকে।
উল্লেখ্য, ৫ আগস্ট সন্ধ্যায় বিমানবন্দর এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন ১৭ বছর বয়সী আব্দুল্লাহ বিন জাহিদ। তিনি বিএনপির আন্দোলনের সময় গুলিতে আহত হন। তার মৃত্যুর পর থেকে পরিবারটি চরম সংকটে পড়েছে। পরিবারের দাবি, আন্দোলনে আত্মত্যাগ করেও তারা দায়িত্বশীলদের কাছ থেকে উপেক্ষা পেয়েছে।
এই বক্তব্য এখন পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সরকারের অংশ হওয়া ব্যক্তি ও দলগুলোর মানবিক দায়িত্ব পালন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। একজন শহীদের পরিবারের অভিযোগ রাজনৈতিক সহানুভূতির অভাব, নেতৃত্বের দায় এবং দায়িত্বশীলতার সংকটকে সামনে নিয়ে এসেছে।