সরকারি চাকরিতে কোটা ইস্যুকে কেন্দ্র করে যে আন্দোলন থেকে একটি অন্তর্বর্তী সরকারের সূচনা হয়েছিল, সেই বিসিএসেই এখন মেধাবীদের বঞ্চনার অভিযোগ উঠেছে। ৪৪তম বিসিএসে ৪৩০টি অতিরিক্ত পদ সুপারিশের প্রস্তাব পাঠানো হলেও প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় তা অনুমোদন না করায় হতাশ হয়েছেন চাকরিপ্রার্থীরা।
সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) বিজ্ঞাপিত এক হাজার ৭১০টি পদ ধরেই চূড়ান্ত সুপারিশ করেছে, যদিও অতিরিক্ত ৪৩০টি পদে নিয়োগের সম্ভাবনা ছিল।
শূন্য পদের চিত্র-
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ পরিসংখ্যান বলছে,
- মোট অনুমোদিত পদ: ১৯,১৯,১১১
- কর্মরত: ১৪,৫০,৮৯১
- শূন্য: ৪,৬৮,২২০ এর মধ্যে প্রথম–নবম গ্রেডে শূন্য: ৬৮,৮৮৪টি
এই বিপুল শূন্যতা সত্ত্বেও ৪৪তম বিসিএসে পদ বাড়ানো হয়নি, যেখানে অতীতে এমন পদ বৃদ্ধির নজির রয়েছে।
অতীত বিসিএসে অতিরিক্ত পদ সুপারিশ-
বিসিএস | বিজ্ঞাপিত পদ | সুপারিশকৃত পদ |
---|---|---|
৪৩তম | ১,৮১৪টি | ২,১৬৩টি |
৪১তম | ২,১৬৬টি | ২,৫২০টি |
৪০তম | ১,৯০৩টি | ১,৯৬৩টি |
৩৮তম | ২,০২৪টি | ২,২০৪টি |
কিন্তু ৪৪তম বিসিএসে যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও কেবল ১,৬৯০ জনকেই সুপারিশ করা হয়েছে, যা আন্দোলনকারীদের হতাশ করেছে।
প্রস্তাবনা ও উপেক্ষা-
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ৪৪তম বিসিএসে ৪৩০টি অতিরিক্ত পদে নিয়োগের প্রস্তাব তৈরি করে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে পাঠায়।
এই প্রস্তাবে যে বিভাগের পদ অন্তর্ভুক্ত ছিল:
- সাধারণ শিক্ষা: ১৮৭টি
- স্বাস্থ্য (পরিবার ও পরিকল্পনা): ৫৪টি
- কর ক্যাডার: ৫৪টি
- মৎস্য: ৩০টি
- কৃষি: ৬৮টি
- রেলওয়ে (বাণিজ্যিক ও প্রকৌশল): ১১টি
- সড়ক ও জনপথ বিভাগ: ২৬টি
সিনিয়র সচিব ড. মো. মোখলেস উর রহমান ১৯ জুন এই প্রস্তাবে স্বাক্ষর করলেও প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে কোনো সাড়া মেলেনি। পিএসসি জানিয়েছে, নতুন পদ অনুমোদন না আসায় তারা আগের পরিকল্পনা ধরেই ফল প্রকাশ করেছে।
মেধাবীদের বঞ্চনার অভিযোগ-
প্রায় ৪ হাজার প্রার্থী মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন, অথচ নিয়োগ পেয়েছেন ১,৬৯০ জন।
চাকরিপ্রার্থীরা বলছেন,
“লিখিত ও ভাইভায় উত্তীর্ণ হয়েও ২,৩০০ জন মেধাবী প্রার্থী নিয়োগের বাইরে রয়ে গেছেন। চাইলে সরকারের সদিচ্ছায় ৪৩০টি পদ বাড়ানো যেত, যা অতীতেও হয়েছে।”
এ নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে আন্দোলনকারীরা রমনা পার্ক থেকে যমুনার সামনে সড়ক অবরোধের চেষ্টা করলে পুলিশ হস্তক্ষেপে তাৎক্ষণিকভাবে তাদের সরিয়ে দেয়।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া ও আশঙ্কা-
জাতীয় নাগরিক কমিটির সাবেক সহমুখপাত্র মোহাম্মদ মিরাজ মিয়া ফেসবুকে লিখেছেন:
“৪৪তম বিসিএসের প্রায় ১২ হাজার ক্যান্ডিডেটের সঙ্গে এই রাষ্ট্র আরেকটা বড় প্রতারণা করতে যাচ্ছে।”
এই পোস্টে সাড়া দিয়েছেন এনসিপির মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ।
জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ ফিরোজ মিয়া বলেন,
“যেহেতু পদ খালি এবং পিএসসি জটের কারণে অনেক সময় বিসিএস প্রক্রিয়া দীর্ঘ হয়, তাই নতুন পদ যুক্ত করাটা যুক্তিসঙ্গত ছিল। সরকারের সদিচ্ছায় এখনো পদ বৃদ্ধি সম্ভব।”
তিনি আরো বলেন,
“জেনারেল ও শিক্ষা ক্যাডারে যথেষ্ট শূন্যতা থাকা সত্ত্বেও পদ বাড়ানো হয়নি, এতে করে ফের দলীয়করণের আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। ইন্টারিম আমলেও স্বচ্ছভাবে এই নিয়োগগুলো সম্ভব ছিল।”
বিসিএস ৪৪: সংক্ষিপ্ত তথ্য-
বিষয়ের নাম | সংখ্যা |
---|---|
বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ | ৩০ নভেম্বর ২০২১ |
আবেদনকারীর সংখ্যা | প্রায় ৩.৫ লাখ |
প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ | ১৫,৭০৮ জন |
লিখিত উত্তীর্ণ | ৪,০০০ জন |
ক্যাডারে সুপারিশ | ১,৬৯০ জন |
৪৪তম বিসিএসে অতিরিক্ত পদ না বাড়ানো এখন বিসিএস পরীক্ষার্থীদের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভ তৈরি করছে। কোটা আন্দোলন থেকে শুরু হওয়া সরকারবিরোধী আন্দোলনের পটভূমিতে বিসিএস নিয়োগে স্বচ্ছতা ও সুনীতির অভাবকে অনেকে রাজনৈতিক সংকেত হিসেবেও দেখছেন।
পদ শূন্য থাকলেও সেই সুযোগ কাজে না লাগানোয় একদল মেধাবী যুবক চাকরির বাইরেই রয়ে গেলেন।