দেশে নতুন করে করোনা সংক্রমণ বাড়লেও টিকা নেওয়ার প্রতি মানুষের আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় অনুদানে পাওয়া ৩২ লাখ ফাইজারের টিকা চলতি বছরের নভেম্বর মাসে মেয়াদ শেষ হওয়ার পথে। জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতার অভাব এবং প্রচার কার্যক্রমের ঘাটতির কারণে এই বিপুল পরিমাণ টিকা অব্যবহৃত থেকে নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
সরকারের সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির (ইপিআই) প্রকল্প ব্যবস্থাপক এস এম আব্দুল্লাহ-আল-মুরাদ জানান, “দুই মাস আগে সারা দেশে ১৭ লাখ টিকা পাঠানো হয়েছে। কিন্তু মানুষের আগ্রহ না থাকায় সেগুলো পড়ে রয়েছে। বেশিরভাগ মানুষ জানেই না, এখনো সরকার বিনামূল্যে করোনার টিকা দিচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, “টিকা সংক্রান্ত সুরক্ষা অ্যাপসটি দীর্ঘদিন বন্ধ রয়েছে, প্রচারও নেই। ফলে মানুষ বুঝতেই পারছে না টিকা দেওয়া হচ্ছে।”
এর আগে গত মাসের শুরুতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বিশেষ করে গর্ভবতী নারী, বয়স্ক ব্যক্তি ও জটিল রোগে আক্রান্তদের জন্য করোনার নতুন ভেরিয়েন্টকে মারাত্মক হুমকি হিসেবে সতর্ক করেছিল। তবে বাস্তবে সাধারণ মানুষের মধ্যে টিকা নেওয়ার আগ্রহ দেখা যায়নি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, চলতি বছর দেশে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৬০৯ জন এবং মারা গেছেন ২৩ জন। গত জুন মাসেই শনাক্ত হয়েছেন ৪৫১ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ২২ জনের। অথচ মে মাসে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল মাত্র ৫০ এবং কারও মৃত্যু হয়নি।
গতকাল বুধবার (৩ জুলাই) ৫১৮টি নমুনা পরীক্ষা করে ২৭ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ৫.২১ শতাংশ। একই সময়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে।
২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা শনাক্ত হয় এবং ১৮ মার্চ প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। এরপর থেকে দেশে মোট ২০ লাখ ৫২ হাজার ১৫৪ জন আক্রান্ত হয়েছেন এবং মারা গেছেন ২৯ হাজার ৫২৩ জন।
চলতি বছর মারা যাওয়া ২৩ জনের মধ্যে ১৬ জনের বয়সই ষাটোর্ধ্ব। বাকিদের মধ্যে ৪০ থেকে ৫০ বছর বয়সী পাঁচজন এবং ১১ থেকে ৩০ বছর বয়সী দুজন রয়েছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর বলেন, “অনেকেই বাসায় চিকিৎসা নিয়েছেন। যাঁরা মারা গেছেন তাঁদের বেশিরভাগই পূর্ব থেকে বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত ছিলেন। আমরা বারবার বলেছি, যাঁরা এখনো টিকা নেননি, তাঁদের টিকা নেওয়া জরুরি। গর্ভবতী নারী, ইমিউনো-কমপ্রোমাইজড ব্যক্তি ও বয়স্কদের জন্য এটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। আবার যাঁরা আগেই টিকা নিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে যাঁরা ষাটোর্ধ্ব বা ঝুঁকিপূর্ণ, তাঁদের ছয় মাস পর আরেকটি ডোজ নেওয়া উচিত।”
টিকার কার্যকারিতা নিয়ে কিছু প্রশ্ন উঠলেও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক হালিমুর রশিদ বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের সিডিসি ২০২৪–২৫ সালের নতুন টিকা ব্যবহারের পরামর্শ দিলেও আমাদের মজুদে থাকা টিকাগুলোও ওমিক্রনের বিরুদ্ধে কিছুটা সুরক্ষা দিতে পারবে।”
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত দেশে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ৩৭ কোটি ৮১ লাখ ডোজ টিকা আমদানি হয়েছে, যার বড় অংশই এসেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কোভ্যাক্স সুবিধার আওতায় অনুদান হিসেবে।
কভিড-১৯ ভ্যাকসিনেশন ড্যাশবোর্ডের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী-
- প্রথম ডোজ নিয়েছেন ১৫ কোটি ৯২ লাখ ৫ হাজার ৬২০ জন
- দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ১৪ কোটি ২২ লাখ ১ হাজার ৬৮৪ জন
- তৃতীয় ডোজ নিয়েছেন ৬ কোটি ৮৬ লাখ ১৫ হাজার ২৫০ জন
- চতুর্থ ডোজ নিয়েছেন ৫১ লাখ ৫৫ হাজার ৯৭৩ জন
তবে বর্তমানে মানুষ সচেতন না হওয়ায় এবং প্রচারণার ঘাটতিতে এই টিকাদান কার্যক্রমে ভাটা পড়েছে।