বাংলাদেশের বগুড়া জেলায় গত সাত দিনে সবজির দাম দ্বিগুণ হয়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। বাজারে পণ্যের মূল্য লাগামহীন হয়ে পড়ায় ক্রেতারা হিমশিম খাচ্ছেন। সবজি ও আলুর উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত বগুড়ায় পাইকারি পর্যায়ে সব ধরনের সবজির দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।
গত এক সপ্তাহের মধ্যে সবজির দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে। পাইকারি বাজারে সবজি বিক্রির কেজি এখন ১০০ বা ১২০ টাকার আশপাশে। সবজির পাশাপাশি কাঁচা মরিচ এবং আলুর দামও বিপুলভাবে বেড়েছে। বিক্রেতাদের মতে, সম্প্রতি টানা বৃষ্টির কারণে অনেক সবজি চাষাবাদ নষ্ট হয়েছে, ফলে পাইকারি বাজারে সবজির সরবরাহ কমেছে। এছাড়া শীতকালীন আগাম সবজির পর্যাপ্ত সরবরাহও বাজারে আসছে না। এসব কারণে সবজির দাম আগের তুলনায় ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
বগুড়ার মহাস্থান হাট দেশের অন্যতম বৃহৎ পাইকারি মোকাম। এখান থেকে রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট ও যশোরসহ বিভিন্ন শহরে সবজি সরবরাহ করা হয়। গত শুক্রবার এ হাটে পাইকারিতে এক কেজি করল্লার দাম ৮০ থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, যা আগের সপ্তাহে ছিল ৫০ টাকা। একইভাবে বেগুন ও কাঁকরোলের দাম ৩০ টাকার জায়গা থেকে বেড়ে ৮০ টাকায় পৌঁছেছে। পটোলের দাম ২৫ টাকা থেকে বেড়ে ৬০ টাকায় এবং শসার দাম ৩০-৪০ টাকা থেকে বেড়ে ৫০-৬৫ টাকায় পৌঁছেছে। ঢাকা অঞ্চলের বাজারে ঢ্যাঁড়স, পেঁপে, মিষ্টিকুমড়া ও কচুমুখির দামও ১৫ থেকে ৩৫ টাকার মধ্যে বৃদ্ধি পেয়েছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে কাঁচা মরিচের দাম দ্বিগুণ হয়ে ২৯০ টাকায় পৌঁছেছে।
মহাস্থান বাজারে শীতকালীন সবজির সরবরাহ গত বছরের তুলনায় অনেক কম। আগের বছরগুলোতে এই সময়ে বাজারে শীতকালীন সবজির উপদ্রব থাকলেও বর্তমানে শুধু লাউ এবং মুলা ছাড়া অন্যান্য সবজির পর্যাপ্ত সরবরাহ নেই। ফলে সবজির দাম অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
মহাস্থান পাইকারি বাজারের পাশাপাশি শহরের খুচরা বাজারগুলোতে সব ধরনের সবজির দাম আরও বেশি। শহরের ফতেহ আলী বাজারে শুক্রবার প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ ৪২০ টাকায়, শসা ৮০ থেকে ১২৫ টাকায়, কাঁকরোল ১০০ থেকে ১১০ টাকায়, করলা ১০০ টাকায়, পটোল ৮০ টাকায়, কচুমুখি ৭০ টাকায়, মুলা ৬০ টাকায়, পেঁপে ৫০ টাকায়, বেগুন ১২৫ থেকে ১৪০ টাকায়, ঢ্যাঁড়স ৮৫ থেকে ৯০ টাকায় এবং একটি লাউ গড়ে ৮০ থেকে ৮৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
বাজারের এই ঊর্ধ্বগতি সাধারণ ক্রেতাদের জন্য বড় সমস্যার সৃষ্টি করেছে। অনেক ক্রেতা বাজারে গিয়ে মনমত পণ্য কিনতে পারছেন না। নিম্নবিত্ত এবং মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য এই দামবৃদ্ধি চরম বিপদের কারণ হতে পারে। ক্রেতারা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, সবজির এই চড়া দাম স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। সব ধরনের সবজি কিনতে না পারলে শারীরিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়তে পারে। তাই দ্রুত সবজির মূল্য নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা আবশ্যক।
এদিকে, জেলা প্রশাসন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে বাজার তদারকি শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দুর্গাপূজার ছুটির পর হিমাগার পর্যায়েও অভিযান পরিচালনা করা হবে। বাজারে শীতকালীন সবজি সরবরাহ বাড়াতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।