চট্টগ্রামের মুরাদনগর মির্দ্দাপাড়ায় পাঁচ বছর আগে এক নারীকে শ্বাসরোধে হত্যার ঘটনায় আদালত এক আসামিকে মৃত্যুদণ্ড ও আরেকজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ সিরাজাম মুনীরা এই রায় ঘোষণা করেন। মামলার প্রধান আসামি নেজাম উদ্দিন আদালতে উপস্থিত ছিলেন, রায় ঘোষণার পর তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। পলাতক রয়েছে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আবদুল হালিম।
আদালতের আদেশ অনুযায়ী, নেজাম উদ্দিনকে মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি ২০ হাজার টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে আরও ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। অপরদিকে, আবদুল হালিমকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড, ২০ হাজার টাকা জরিমানা এবং জরিমানা অনাদায়ে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এ মামলার অপর আসামি আবু সিদ্দিক রুবেলকে খালাস দেওয়া হয়েছে।
দণ্ডপ্রাপ্ত নেজাম উদ্দিন (৩০) চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার রাজানগর ইউনিয়নের হালিমপুর গ্রামের বাসিন্দা। তিনি নগরীর ডবলমুরিং থানার উত্তর আগ্রাবাদে বসবাস করতেন।
যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আবদুল হালিম (৪৫) ভোলার চরফ্যাশনের দক্ষিণ চর আইচার অধিবাসী এবং খালাস পাওয়া আবু সিদ্দিক রুবেল (২৯) নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী থানার মির্দ্দাপাড়ায় বসবাস করতেন।
আদালতের পেশকার ওমর ফুয়াদ জানান, আসামি নেজাম উদ্দিন ও আবদুল হালিমের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আদালত এই রায় দিয়েছেন।
তিনি আরও জানান, নেজাম উদ্দিন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন, যা মামলার তদন্তে সহায়ক প্রমাণিত হয়।
২০১৯ সালের ১৩ মে বায়েজিদ বোস্তামী থানার মুরাদনগর মির্দ্দাপাড়ায় জামালের মালিকানাধীন একটি ভবনে ৩০ বছর বয়সি রেবেকা সুলতানা মনির মরদেহ পাওয়া যায়। স্থানীয়দের মাধ্যমে দুর্গন্ধের খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে যায় এবং মেঝেতে পড়ে থাকা মরদেহটি উদ্ধার করে।
পরে তদন্তে জানা যায়, পাঁচ মাস আগে আবদুল হালিম ওই বাসাটি আবদুল মজিদ নামে ভাড়া নেন এবং সেখানে পতিতাবৃত্তির জন্য কয়েকজন নারীকে রেখেছিলেন।
মামলার নথি অনুযায়ী, মনি তার বোনের বিয়ের জন্য আবদুল হালিমের কাছে থাকা দেড় লাখ টাকা দাবি করলে হালিম তাকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেন এবং সহযোগিতা চান তার পুরোনো পরিচিত নেজাম উদ্দিনের। ২০১৯ সালের ১১ মে সকালে বাসায় একা থাকা মনিকে শ্বাসরোধে হত্যা করে নেজাম। এরপর তিনি মনির মোবাইল ফোনটি নিয়ে পালিয়ে যান। ওই ফোনের সূত্র ধরে পুলিশ হত্যাকাণ্ডের এক সপ্তাহ পর নেজামকে গ্রেফতার করে।
২০২০ সালে চট্টগ্রামের চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে নেজাম উদ্দিন, আবদুল হালিম এবং আবু সিদ্দিক রুবেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। মামলায় উল্লেখ করা হয়, আবদুল হালিমের নির্দেশে নেজাম উদ্দিন মনিকে শ্বাসরোধে হত্যা করেন এবং এই ঘটনার বিষয়ে জানলেও আবু সিদ্দিক রুবেল তা গোপন রাখেন। মামলায় ১১ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আদালত বৃহস্পতিবার এই রায় প্রদান করেন।
এই রায় সমাজে অপরাধ প্রবণতা রোধে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা প্রেরণ করেছে, যা আইনের শাসনের প্রতীক হিসেবে গণ্য হচ্ছে।