অস্ট্রেলিয়া শিশুদের জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা আরোপের উদ্যোগ নিয়েছে। এই আইনটি পাস হলে এটি হবে বিশ্বের প্রথম কোনো দেশ, যেখানে এমন আইন কার্যকর হবে। অস্ট্রেলিয়া সরকার জানিয়েছে, আগামী বছরের শেষ নাগাদ এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। আইনটি সংসদে উত্থাপন এবং বাস্তবায়ন নিয়ে ইতোমধ্যে নানা আলোচনা চলছে।
গত ৭ নভেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ প্রস্তাবিত আইনটির প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে বলেন, “এই আইনটি আগামী সপ্তাহে সংসদে উত্থাপন করা হবে। এর লক্ষ্য হলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের নেতিবাচক প্রভাব থেকে অস্ট্রেলিয়ার শিশুদের রক্ষা করা।”
তিনি আরও বলেন, “এই আইনটি মা-বাবাদের জন্য সহায়ক হবে, যারা অনলাইনে তাদের সন্তানদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। আমি চাই অস্ট্রেলিয়ার পরিবারগুলো জানুক যে, সরকার তাদের পাশে রয়েছে।”
আইনটিতে কোনো জরিমানার বিধান রাখা হয়নি, তবে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্রতিষ্ঠানকে শিশু-কিশোরদের প্রবেশ রোধে যুক্তিসংগত পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর ভাষ্যমতে, এই উদ্যোগ শুধু অস্ট্রেলিয়ার জন্য নয় বরং গোটা বিশ্বের জন্য একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে। তিনি আরও উল্লেখ করেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম শিশুদের মানসিক বিকাশে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে, যা ঠেকাতে এই আইন প্রণয়ন অপরিহার্য।
অস্ট্রেলিয়ার যোগাযোগমন্ত্রী মিশেল রোল্যান্ড জানিয়েছেন- ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম এবং ইউটিউবের মতো জনপ্রিয় সামাজিক মাধ্যমগুলো এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসবে। আইনটি পাস হওয়ার পর কার্যকর করতে প্রায় ১২ মাস সময় লাগবে এবং তারপর নিয়মিত পর্যালোচনার আওতায় রাখা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
তবে এই আইন বাস্তবায়ন নিয়ে সমালোচনাও রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, অনলাইনে বয়সসীমা মেনে চলা নিশ্চিত করতে প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তারা প্রশ্ন তুলেছেন, কীভাবে সুনির্দিষ্টভাবে নিশ্চিত করা হবে যে, নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা বয়সসীমার নিচের শিশু-কিশোররা এসব মাধ্যম ব্যবহার করবে না।
অস্ট্রেলিয়ার শিশু অধিকার নিয়ে কাজ করা বৃহত্তম সংস্থা ‘দ্য অস্ট্রেলিয়ান চাইল্ড রাইটস টাস্কফোর্স’ প্রস্তাবিত আইনটির কঠোর সমালোচনা করেছে। তারা এই আইনটিকে “খুব ভোঁতা একটি যন্ত্র” হিসেবে আখ্যায়িত করেছে এবং দাবি করেছে যে, আইনটি কার্যকর হলেও এটি বাস্তবে শিশুদের জন্য তেমন কার্যকর সুরক্ষা নিশ্চিত করবে না। সংস্থাটি আরও বলেছে, শিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আরও সুনির্দিষ্ট এবং কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।
অস্ট্রেলিয়ার এই উদ্যোগ বিশ্বজুড়ে নীতিনির্ধারকদের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে বয়সসীমা নিয়ে নতুন করে ভাবনার দ্বার খুলতে পারে। এখন দেখার বিষয়, প্রস্তাবিত আইনটি সংসদে পাস হওয়ার পর কেমন প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে এবং কার্যকর হলে এটি কেমন ফলাফল আনে।