কক্সবাজারের টেকনাফের জীবনযাত্রার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত নাফ নদীর মৎস্য আহরণ। তবে ২০১৭ সালের ৩১ আগস্ট মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ও সীমান্তের নিরাপত্তার কারণে এই নদীতে মৎস্য আহরণের ওপর সাময়িক নিষেধাজ্ঞা জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। দুই মাসের জন্য জারি করা এই নিষেধাজ্ঞা সাত বছর পরেও বহাল আছে। যা স্থানীয় নিবন্ধিত ১০ হাজার ৫৮০ জন জেলে পরিবারকে চরম দুর্ভোগে ফেলেছে।
জনস্বার্থে দায়ের করা এক রিটের শুনানিতে, বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি মুবিনা আসাফের নেতৃত্বে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ কক্সবাজার জেলা প্রশাসনকে এ বিষয়ে আবেদন নিষ্পত্তির জন্য ৩০ দিনের সময়সীমা নির্ধারণ করেছেন। একইসঙ্গে, আদালত জানতে চেয়েছেন কেন এই নিষেধাজ্ঞা আইনগত কর্তৃত্বের বাইরে এবং বেআইনি ঘোষণা করা হবে না।
রিটকারী পক্ষের আইনজীবী রবিউল আলম সৈকত জানান, সাত বছরের দীর্ঘ নিষেধাজ্ঞার ফলে এসব জেলে পরিবার মারাত্মক অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে। তিনি বলেন, “নাফ নদীতে মৎস্য আহরণ করতে না পারায় এসব জেলে পরিবার চরম মানবেতর জীবনযাপন করছে। অনেকেই নিঃস্ব হয়ে গেছে।”
প্রকৃতপক্ষে, টেকনাফের স্থানীয় সমাজকর্মী মোহাম্মদ আমান উল্লাহ চলতি বছরের ১৫ আগস্ট জেলেদের পক্ষে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক বরাবর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আবেদন করেন। আবেদনে উল্লেখ করা হয়, স্থানীয় নিবন্ধিত জেলেরা দীর্ঘ সাত বছর ধরে একমাত্র জীবিকা থেকে বঞ্চিত। নিষেধাজ্ঞা জারির পরপরই স্থানীয় বিজিবি সদস্যরা জেলেদের মৎস্য আহরণে বাধা দিতে শুরু করেন। এমনকি অনেককে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করার অভিযোগও আছে।
এই পরিস্থিতিতে, কষ্টের জীবনযাপন করা জেলেদের জীবন-জীবিকা রক্ষার জন্য এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার ও বিজিবির বাধা দূর করার আবেদন জানানো হয়। রবিউল আলম সৈকত বলেন, “আমরা আশা করি, আদালতের নির্দেশে প্রশাসন দ্রুত পদক্ষেপ নেবে এবং এই সংকট নিরসনে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।”
হাইকোর্টের আদেশে আগামী ৩০ দিনের মধ্যে জেলা প্রশাসনকে এই আবেদন নিষ্পত্তির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় জেলে পরিবারগুলোর এখন আশা, দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান হবে এবং তারা আবারও নাফ নদীতে মৎস্য আহরণ করে নিজেদের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক করতে পারবে।