বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ সম্প্রতি এক গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্যে জনবান্ধব ও অন্তর্ভুক্তিমূলক বিচারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেছেন।
তিনি বলেন, বিচারব্যবস্থাকে আরও জনবান্ধব ও সবার জন্য সহজলভ্য করতে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর যৌথ উদ্যোগ ও কার্যকরী সমন্বয় জরুরি।
এই আহ্বানটি তিনি জানান সোমবার থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে অনুষ্ঠিত একটি আঞ্চলিক সম্মেলনে। সম্মেলনটি আয়োজন করে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ইউএনডিপি, থাইল্যান্ড ইনস্টিটিউট অব জাস্টিস, জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচি ইউএনইপি, আন্তর্জাতিক আইনি সংস্থা আইডিএলও এবং ইউনেসকো। এ সম্মেলনে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান বিচারপতি বলেন, বাংলাদেশের জনগণ স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার জন্য দীর্ঘদিন ধরে যে আকাঙ্ক্ষা লালন করছে। তার প্রতিফলন সাম্প্রতিককালের গণআন্দোলনগুলোতে স্পষ্টভাবে দেখা গেছে।
জুলাই এবং আগস্ট মাসে শিক্ষার্থীদের ও সাধারণ জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে সংঘটিত এই গণআন্দোলন প্রমাণ করে। একটি ন্যায়ভিত্তিক সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা ও স্বাধীন বিচার বিভাগের উপস্থিতি কতটা জরুরি। এই আন্দোলনের মাধ্যমে দেশের জনগণ তাদের মৌলিক অধিকার ও বিচার ব্যবস্থায় সমান সুযোগের দাবি আবারও তুলে ধরেছেন।
এসময় সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেন, জাতি, ধর্ম, বর্ণ কিংবা অর্থনৈতিক অবস্থা নির্বিশেষে সকল নাগরিকের জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক বিচারব্যবস্থা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
তিনি জানান, তৃণমূল পর্যায়ে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশে ‘গ্রাম আদালত’ নামের যে স্থানীয় বিচার ব্যবস্থা কার্যকর রয়েছে, তা ইতিমধ্যে সুফল দিতে শুরু করেছে। তিনি বলেন, গ্রাম আদালতগুলো ‘কমিউনিটি জাস্টিস’ প্রতিষ্ঠায় একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছে। যা প্রত্যন্ত এলাকার মানুষকে সহজে ও দ্রুত আইনি সেবা প্রাপ্তিতে সহায়তা করছে।
বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার জন্য ইতিমধ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানান প্রধান বিচারপতি। এর মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ হচ্ছে সরকারের কাছে আলাদা বিচার বিভাগীয় সচিবালয় প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব। তিনি বলেন, এই পৃথক সচিবালয় বিচার বিভাগের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করবে, যা বিচারব্যবস্থাকে আরও জনবান্ধব ও স্বাধীন করতে সহায়ক হবে।
এছাড়া বিচার বিভাগের স্বায়ত্তশাসন রক্ষার লক্ষ্যে সুপ্রিম কোর্ট ইতিমধ্যেই ‘সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল’-এর পুনরুজ্জীবন ঘটিয়েছে বলে জানান প্রধান বিচারপতি। তিনি বলেন, এই কাউন্সিল বিচারকদের নিয়োগ এবং তাদের কাজের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। পাশাপাশি, উচ্চ আদালতের বিচারক নিয়োগে একটি স্বচ্ছ ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া চালু করার উদ্যোগ গ্রহণের কথাও তিনি উল্লেখ করেন।
বাংলাদেশের বিচার বিভাগের এসব উদ্যোগ ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে ধরা হচ্ছে। প্রধান বিচারপতির এই বক্তব্য দেশব্যাপী স্বচ্ছ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক বিচারব্যবস্থা গড়ে তোলার ব্যাপারে বাংলাদেশের অঙ্গীকারকে আরও শক্তিশালী করে। তাঁর আহ্বান শুধু বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থা নয় বরং এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অন্যান্য দেশগুলোর জন্যও নতুন এক সম্ভাবনার দিগন্ত উন্মোচন করে।