গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে সাবেক ১০ মন্ত্রীসহ ১৪ জনকে আজ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হচ্ছে। ৪৬ জনের বিরুদ্ধে জারি করা গ্রেপ্তারি পরোয়ানার আওতায় এই প্রথমবারের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্তদের ট্রাইব্যুনালে তোলা হলো। বিচারিক কার্যক্রমের এ পদক্ষেপ ইতিহাসে নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে।
ট্রাইব্যুনালের সিদ্ধান্ত এবং অভিযুক্তরা-
গত ২৭ অক্টোবর বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে গঠিত তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এই সিদ্ধান্ত দেন। বেঞ্চের অন্য দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
আসামির তালিকায় রয়েছেন সাবেক মন্ত্রী আনিসুল হক, ফারুক খান, ডা. দীপু মনি, রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনু, ড. আব্দুর রাজ্জাক, শাজাহান খান, জুনাইদ আহমেদ পলক, সালমান এফ রহমান, ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, কামাল আহমেদ মজুমদার, গোলাম দস্তগীর গাজী, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক এবং সাবেক স্বরাষ্ট্র সচিব জাহাঙ্গীর আলম। তারা সবাই এর আগে অন্য মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে ছিলেন।
ট্রাইব্যুনাল এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা কঠোর করা হয়েছে। মোতায়েন করা হয়েছে র্যাব, পুলিশ এবং সাদা পোশাকের গোয়েন্দা সদস্যদের। এর মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়েছে যে বিচার প্রক্রিয়া নিরবচ্ছিন্নভাবে চলবে।
প্রসিকিউশন ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা-
চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম জানান, অভিযুক্তদের সঙ্গে একজন আইনজীবী এবং একজন নিকটাত্মীয় উপস্থিত থাকতে পারবেন। তবে সাধারণ মানুষের প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। প্রসিকিউটর আরও জানান, পুরাতন কোর্ট বিল্ডিং পুনরায় ব্যবহারের প্রস্তুতি চূড়ান্ত হলেও সেখানে ইন্টারনেট এবং কম্পিউটার সংযোগ স্থাপন বাকি রয়েছে। তাই আপাতত কার্যক্রম টিনশেড ভবনে অনুষ্ঠিত হবে।
তিনি বলেন, অভিযুক্তদের কাছে গণহত্যা সংক্রান্ত প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন এবং অভিযোগের কপি হস্তান্তর করা হবে। এই প্রতিবেদনগুলো বিচার প্রক্রিয়ার ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে। যদিও তদন্ত সংস্থা চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত করতে আরও এক মাস সময় চেয়েছে, তারপরও আইনি প্রক্রিয়া নির্ধারিত গতিতে চলবে।
গণতন্ত্র এবং সুবিচারের অঙ্গীকার-
তাজুল ইসলাম আরও বলেন, “এই ট্রাইব্যুনালে অতীতের মতো কোনো অবিচারের ঘটনা ঘটবে না। সরকার সুবিচার নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতিতে অটল। শুধু জুলাই-আগস্টে ঘটে যাওয়া গণহত্যার বিচার নয়, আগের সরকারের সময় ঘটে যাওয়া গুম, খুন এবং বিচারবহির্ভূত হত্যার বিচারও এখানে করা হবে।”
ইন্টারপোলের মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “তার বিরুদ্ধে রেড অ্যালার্ট নোটিশ জারি করা হয়েছে। অপরাধীর বহিঃসমর্পণ চুক্তি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এ প্রসঙ্গে তিনি আরও জানান, ট্রাইব্যুনালে শুধুমাত্র আইনজীবী এবং অনুমোদিত সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকার থাকবে। সাংবাদিকদের জন্য সঠিক আইডি কার্ড বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তবে মোবাইল ফোন নিয়ে প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
গত ১৭ অক্টোবর শেখ হাসিনাসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির মধ্য দিয়ে এ বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়। দীর্ঘদিনের আইনি জটিলতার পর এই বিচার প্রক্রিয়া দেশকে ন্যায়বিচারের পথে এগিয়ে নেবে বলে আশা করছেন বিশ্লেষকরা।
মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার একদিকে যেমন ইতিহাসের অন্ধকার অধ্যায়গুলো তুলে ধরবে। অন্যদিকে তা জাতির সামনে নতুন আলোর পথ দেখাবে। সরকারের দৃঢ় মনোভাব এবং সুবিচারের প্রতিশ্রুতি এ প্রক্রিয়াকে আরও গতিশীল করবে।