বিচার বিভাগের প্রশাসনিক স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করতে নিজস্ব সচিবালয় প্রতিষ্ঠার কাজ প্রায় শেষ। সুপ্রিম কোর্টের অধীনে এই সচিবালয় গঠনের মধ্য দিয়েই বিচার বিভাগের কাঙ্ক্ষিত সংস্কার শুরু হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ।
রোববার (৪ মে) চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত এক সেমিনারে এসব কথা বলেন তিনি। ‘রিমেইনিং দ্য ফিউচার অব জাস্টিস’ শীর্ষক এই আয়োজনে অংশ নেয় এ.কে. খান ফাউন্ডেশন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদ।
প্রধান বিচারপতি বলেন, ২০২৪ সালের ২১ সেপ্টেম্বর ঘোষিত বিচার বিভাগ সংস্কার রোডম্যাপ অনুযায়ী তিনটি বড় লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে এ উদ্যোগ—স্বাধীনতা, প্রশাসনিক স্বায়ত্তশাসন ও কার্যকারিতা।
এই রোডম্যাপের আওতায় গঠিত হয়েছে দুটি স্বাধীন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান—সুপ্রিম জুডিশিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্ট কাউন্সিল এবং সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল। এই দুটি প্রতিষ্ঠানই বিচারপতি নিয়োগ ও অপসারণের দায়িত্বে থাকবে, যেখানে অন্য কোনো সংস্থার হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই।
প্রধান বিচারপতি জানান, জেলা পর্যায়ে বিচারকদের বদলি ও পদায়নে স্বচ্ছতা আনতে একটি বিস্তৃত নীতিমালা তৈরি করে সরকারের কাছে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া ইতোমধ্যে দুর্নীতিবিরোধী পদক্ষেপ, ডিজিটাল কেস ট্র্যাকিং, পেপার-ফ্রি কোম্পানি বেঞ্চ, হেল্পলাইন চালুসহ ১২টি নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।
তিনি বলেন, শিশু আদালত, বিদ্যুৎ আদালতসহ বিশেষায়িত আদালত গঠনের প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বাণিজ্যিক বিরোধ নিষ্পত্তিতে প্রতিটি জেলায় আলাদা কমার্শিয়াল কোর্ট গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের আগ্রহের কথাও উল্লেখ করেন প্রধান বিচারপতি। তিনি বলেন, তারা এই সংস্কারে সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত। এতে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশ আরও উন্নত হবে।
প্রধান বিচারপতি বলেন, এসব উদ্যোগ বিচ্ছিন্ন কোনো সিদ্ধান্ত নয়। এগুলো একটি বড় সাংবিধানিক পরিবর্তনের অংশ। যার ভিত্তি বিচার বিভাগের পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন।
তার ভাষায়, বিচার বিভাগ যদি স্বাধীন না হয়, তাহলে রাষ্ট্রের অন্য কোনো খাতে স্থায়ী সংস্কার সম্ভব নয়।
তিনি জানান ইউএনডিপি, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও সুইডেন এই রোডম্যাপে নীতিগত সহায়তা দিচ্ছে। তাদের সহযোগিতায় এই সংস্কার এগিয়ে যাচ্ছে।
প্রযুক্তির প্রসঙ্গে প্রধান বিচারপতি বলেন, ডিজিটাল বাস্তবতায় বিচার ব্যবস্থাকেও নতুন করে সাজাতে হবে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং ডিজিটাল অপরাধের মধ্যে ভারসাম্য রাখতে হবে। আর এ ভারসাম্য তৈরিই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
তিনি আরও বলেন, এআই এবং ন্যানো প্রযুক্তির মতো নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার বিচার ব্যবস্থায় নতুন দিগন্ত খুলে দিচ্ছে। এ সুযোগ কাজে লাগাতে হবে।