পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) অধীন আফতাবনগরের দুটি ব্লক এবং স্যানভ্যালির আংশিক এলাকায় অস্থায়ী পশুর হাট বসানোর ওপর স্থগিতাদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
সোমবার (৫ মে) বিচারপতি কাজী জিনাত হক ও বিচারপতি আইনুন নাহার সিদ্দিকার নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ এক রিটের প্রাথমিক শুনানি শেষে এ আদেশ দেন। একই সঙ্গে আদালত একটি রুল জারি করেছেন। স্থানীয় বাসিন্দা আজাদ আলীর দায়ের করা রিট আবেদনের শুনানিতে রিটকারী পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. আনোয়ার হোসেন (হুসাইন আনোয়ার) ও মোহাম্মদ আলী খান।
এর আগে ২৯ এপ্রিল ডিএনসিসির পক্ষ থেকে ঈদুল আজহা উপলক্ষে পশুর হাটের জন্য একটি ইজারা বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। সেখানে ৩ নম্বর কলামে উল্লেখ করা হয়, বাড্ডা ইস্টার্ন হাউজিংয়ের আফতাবনগর এলাকার ব্লক-এম-৪, এম-৫, এন-৪ (লেকের উত্তর পাশের আংশিক) এবং স্যানভ্যালির (আংশিক) খালি জায়গায় অস্থায়ী পশুর হাট বসানো হবে। এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে স্থানীয় বাসিন্দা আজাদ আলী ৪ মে হাইকোর্টে রিট করেন।
রিট আবেদনে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় (এলজিআরডি) মন্ত্রণালয়ের সচিব, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক, প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা সহ সংশ্লিষ্ট কয়েকজনকে বিবাদী করা হয়েছে।
আইনজীবী আনোয়ার হোসেন জানান, যেসব স্থানে হাট বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তা সম্পূর্ণভাবে ব্যক্তি মালিকানাধীন আবাসিক এলাকা। সেখানে সিটি করপোরেশনের কোনো জমি নেই। তাছাড়া এলাকায় লাখ লাখ মানুষের বসতি রয়েছে। পাশাপাশি রয়েছে একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, যেমন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়। অস্থায়ী হাট বসানো হলে ওইসব বাসিন্দাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিবেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এসব কারণেই স্থানীয় এক বাসিন্দা আদালতের দ্বারস্থ হন। শুনানি শেষে আদালত রুল জারি করেন এবং স্থগিতাদেশ দেন। এর ফলে আফতাবনগরের এম-৪, এম-৫, এন-৪ ব্লক এবং স্যানভ্যালির আংশিক অংশে এ বছর পশুর হাট বসানো যাবে না।
এর আগের দিন, রোববার (৪ মে), একই ধরনের আরেকটি রিটের শুনানি শেষে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অধীন আফতাবনগরের কিছু অংশে অস্থায়ী পশুর হাট বসানোর ওপরও স্থগিতাদেশ দেন হাইকোর্ট।
২১ এপ্রিল প্রকাশিত দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ইজারা বিজ্ঞপ্তির ৫ নম্বর কলামে ‘আফতাবনগর (ইস্টার্ন হাউজিং) ব্লক-ই, এফ, জি, এইচ, সেকশন-১ ও ২ এর খালি জায়গা’ পশুর হাটের জন্য নির্ধারিত ছিল। এই ঘোষণার বিরুদ্ধে রিট করেন আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দ। তিনি ওই কলামের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আদালতে আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত দক্ষিণ সিটির ঘোষিত স্থানেও হাট বসানো নিষিদ্ধ করেন।
উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ঘোষিত পশুর হাটের স্থান দুটোই এখন আদালতের স্থগিতাদেশের আওতায়। ফলে এবারের ঈদে আফতাবনগর ও এর সংলগ্ন এলাকাগুলোর উল্লেখিত অংশে কোনো অস্থায়ী পশুর হাট বসানো যাচ্ছে না।
এই রায় দুটি নগর পরিকল্পনা ও বসতবাড়ি সংলগ্ন স্থানে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয় এমন হাট বসানো নিয়ে বিচার বিভাগের স্পষ্ট অবস্থান তুলে ধরেছে। স্থানীয়দের জীবনমান রক্ষা এবং নগর ব্যবস্থাপনায় সুশাসন প্রতিষ্ঠার প্রশ্নে এটি একটি দৃষ্টান্ত হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।