হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের এক নেতার বিরুদ্ধে নারী বিদ্বেষমূলক বক্তব্য দেওয়ায় লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছেন ছয় বিশিষ্ট নারী। ওই বক্তব্যে এক নারীকে জনসমক্ষে মাইকে ‘বেশ্যা’ বলে আখ্যায়িত করা হয় যা নারীর মর্যাদার বিরুদ্ধে এবং সরাসরি অপমানজনক বলে মনে করছেন তারা।
লিগ্যাল নোটিশটি পাঠিয়েছেন তিনজন সাহিত্যিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব এবং তিনজন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নেত্রী। লেখিকা ও সংস্কৃতিকর্মীদের মধ্যে রয়েছেন উম্মে রায়হানা, উম্মে ফারহানা ও ক্যামেলিয়া শারমিন চূড়া। এনসিপির পক্ষ থেকে লিগ্যাল নোটিশে স্বাক্ষর করেছেন সৈয়দা নীলিমা দোলা, দ্যুতি অরণ্য চৌধুরী ও নীলা আফরোজ।
তারা গণমাধ্যমকে জানান, বাংলাদেশের নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতায় নারীর প্রতি এমন অবমাননাকর আচরণের আর কোনো স্থান নেই। বিশেষ করে জুলাই অভ্যুত্থানের পর। যেখানে নারীদের সক্রিয় ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সেখানে এই ধরনের কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য শুধু অনভিপ্রেত নয় বরং তা নারী মুক্তি ও মর্যাদার প্রতি সরাসরি আঘাত।
তাদের মতে, সরকারের গঠিত নারী সংস্কার কমিশনের সঙ্গে কাজ করা নারীদেরকে এভাবে গালি দেওয়া মানে গোটা নারীবিদ্বেষী দৃষ্টিভঙ্গিকে উসকে দেওয়া। তারা বলেন, নারী বিষয়ক প্রস্তাবনায় দ্বিমত বা সমালোচনার অধিকার থাকতে পারে কিন্তু সেই সমালোচনায় গালাগালি বা অপমানের স্থান নেই।
লিগ্যাল নোটিশে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার বিষয়টিও তুলে ধরা হয়েছে। তারা প্রশ্ন তোলেন, আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্ট কোনো দল কিভাবে এমন জনসমাবেশের আয়োজন করতে পারে, যেখানে নারীদের সম্মানহানিকর বক্তব্য দেওয়া হয়? একই সঙ্গে তারা এ-ও জানতে চেয়েছেন, ইসলামী আইনের যে দোহাই দিয়ে নারী বিদ্বেষী বক্তব্য দেওয়া হয় সেই আইন অনুযায়ী হেফাজত নেতারা কী তাদের নিজ নিজ পরিবারের নারীদের সম্পত্তির অধিকার নিশ্চিত করেছেন?
এই ছয় নারী অ্যাডভোকেট পলাশের মাধ্যমে হেফাজতের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নিয়েছেন। আজ ৫ মে দুপুরে আনুষ্ঠানিকভাবে মামলাটি দায়ের করা হয়। নারী সংস্কার কমিশনের মতো একটি সময়োপযোগী উদ্যোগের প্রেক্ষাপটে জনপরিসরে নারীকে ‘বেশ্যা’ বলা শুধু একটি ব্যক্তিগত আক্রমণ নয় এটি সামগ্রিকভাবে নারীর স্বাধীনতা, অধিকার ও মর্যাদার ওপর হুমকি বলে তারা উল্লেখ করেছেন।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশের প্রগতিশীল ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোর মধ্যেও নিন্দার ঝড় উঠেছে। অনেকেই মনে করছেন, এ ধরনের অপমানজনক বক্তব্যের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি যাতে ভবিষ্যতে কেউ আর এমন নারীবিদ্বেষী আচরণ করতে সাহস না পায়।