ময়মনসিংহে প্রায় ছয় বছর আগে ঘটে যাওয়া এক চাঞ্চল্যকর ঘটনায় ১৭ পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করেছেন এক ভুক্তভোগী বাবা। তার অভিযোগ, ১০ লাখ টাকা ঘুষ দিতে না পারায় পুলিশ তার ছেলেকে বন্দুকযুদ্ধে হত্যা করেছে। রোববার ময়মনসিংহের সদর আমলি আদালতে এই মামলা করেন হারুন অর রশিদ নামে এক ব্যক্তি। মামলাটি আমলে নিয়ে আদালত কোতোয়ালি মডেল থানার ওসিকে বিষয়টি তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার বিবরণে উঠে এসেছে ২০১৮ সালের ২২ মে’র সেই রাতের কথা। ময়মনসিংহ জেলা গোয়েন্দা শাখার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আশিকুর রহমানের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল পুরোহিতপাড়ায় অভিযান চালিয়ে হারুন অর রশিদের ছেলে মো. রাজনকে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যায়। রাজনের বাবা জানান, ছেলেকে ছাড়ানোর জন্য বারবার চেষ্টা করেও তিনি ব্যর্থ হন। দুদিন পর ২৪ মে সকালে যখন তিনি আবার ছেলেকে ছাড়াতে ডিবি কার্যালয়ে যান, তখন ওসি আশিকুর রহমান ১০ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন। টাকা জোগাড় করতে ব্যর্থ হয়ে হারুন অর রশিদ জানতে পারেন, রাতের মধ্যে তার ছেলেকে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ হত্যা করা হয়েছে।
মামলায় বলা হয়, ২৪ মে রাত পৌনে দুইটার দিকে রাজনকে পুরোহিতপাড়ার রেলওয়ে ভাঙ্গাওয়াল সংলগ্ন পুকুরপাড় এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে পুলিশের নির্দেশে রাজনকে বুকে এবং পেটের নিচে গুলি করা হয়। ঘটনাস্থলেই তিনি লুটিয়ে পড়েন এবং মারা যান। পরবর্তীতে রাজনের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
এই মামলায় অভিযুক্তদের তালিকায় রয়েছেন ওসি আশিকুর রহমান ছাড়াও পুলিশ পরিদর্শক মোখলেছুর রহমান, এসআই ফারুক আহমেদ, পরিমল চন্দ্র দাস, আক্রাম হোসেন, এএসআই আব্দুল মজিদসহ আরও কয়েকজন পুলিশ সদস্য।
রাজন স্থানীয় একজন ঠিকাদারের সঙ্গে কাজ করতেন এবং দুই ভাইয়ের মধ্যে তিনি বড় ছিলেন। তার পড়াশোনা থেমে যায় এসএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ার পর। স্থানীয় সূত্রে অভিযোগ, রাজন মাদক ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তবে তার বাবা হারুন অর রশিদ এই অভিযোগ সরাসরি নাকচ করেছেন। তিনি বলেন, “আমার ছেলে মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিল না। যদি প্রমাণ পাওয়া যায় আমি সহ বিচার হোক।”
মামলার পরিপ্রেক্ষিতে ময়মনসিংহ আদালত পুলিশের পরিদর্শক পিএসএম মোস্তাছিনুর রহমান জানিয়েছেন, আদালত মামলাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তদন্ত শেষে বিষয়টি আদালতে উত্থাপিত হবে এবং তাতে নির্ধারিত হবে পুলিশের এসব কর্মকর্তার ভূমিকা।
এই ঘটনার প্রেক্ষিতে দেশজুড়ে পুলিশি কার্যক্রমে দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের বিষয়গুলো নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের কার্যক্রমের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার দাবি আরও জোরালো হচ্ছে।