দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) গাইবান্ধার সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ সম্পর্কে তথ্য প্রকাশ করেছে। সংস্থাটির অনুসন্ধান থেকে জানা গেছে যে, তিনি অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে ১০০ কোটি টাকার মূল্যের জমির মালিক হয়েছেন। এই প্রেক্ষাপটে, দুদক তাঁর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নিয়েছে এবং আদালতে একটি আবেদন করেছে।
আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে যে, তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে ও সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করে নিজের এবং পরিবারের সদস্যদের নামে বিপুল পরিমাণ জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন। দুদকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, আবুল কালাম আজাদ গোবিন্দগঞ্জে ১০০ কোটি টাকার জমি, ছয়তলা বাড়িসহ ৬টি ফ্ল্যাট, বগুড়া শহরে ২টি বাড়ি, মোহাম্মদপুরে ১টি বাড়ি, গাজীপুরে একটি গার্মেন্টস কারখানা এবং ২০টি বাস ও ট্রাক কিনেছেন। এসব সম্পত্তি অর্জনের পদ্ধতি এবং সম্পর্কে বিস্তারিত তদন্ত চলছে।
সর্বশেষ খবর হচ্ছে, দুদক তদন্তের আওতায় আবুল কালাম আজাদ ও তাঁর স্ত্রী বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন বলে নিশ্চিত হয়েছে। এ কারণে, দুদক তাঁদের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আদালতে আবেদন করেছে। আজ ২৪ অক্টোবর ২০২৪, ঢাকার মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন এই নিষেধাজ্ঞার আদেশ দিয়েছেন। আদালতের এ সিদ্ধান্ত দুদকের দুর্নীতি বিরোধী অভিযানকে আরো কার্যকরী করবে বলে মনে করা হচ্ছে।
এদিকে, একই দিন আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত এসেছে। যশোর-৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শাহীন চাকলাদার এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের বিদেশযাত্রায়ও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে আদালত। দুদকের অভিযোগ, শাহীন চাকলাদার টেন্ডারবাজি, সন্ত্রাসী কার্যকলাপ এবং ক্ষমতার অপব্যবহার করে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। তাঁর স্ত্রী, দুই কন্যা এবং এক পুত্রের নামেও একই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। দুদক তদন্তের অংশ হিসেবে তাঁদের বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করেছে।
এছাড়া, বরগুনার সাবেক সংসদ সদস্য শওকত হাচানুর রহমানের বিদেশযাত্রায়ও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত। দুদকের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে- তিনি চাঁদাবাজি, জমি দখল এবং ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জনের অভিযোগের শিকার। তাঁর বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়ায় এ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
এইসব ঘটনাবলী বাংলাদেশের রাজনৈতিক দৃশ্যপটে একটি নতুন পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়। সরকারের দুর্নীতিবিরোধী কঠোর অবস্থান এবং দুদকের সক্রিয় তদন্ত প্রক্রিয়া দেশবাসীর মধ্যে আস্থা সৃষ্টির পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে জনগণের প্রত্যাশা এবং সরকারের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের জন্য এটি একটি সময়োপযোগী এবং প্রয়োজনীয় উদ্যোগ বলে মনে হচ্ছে। বাংলাদেশের জনগণ আশা করছে, এ ধরনের কার্যক্রমের মাধ্যমে শাস্তির মুখোমুখি হবে অপরাধীরা এবং দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে শুদ্ধতার প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।