বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সম্প্রতি একটি গুরুত্বপূর্ণ তদন্ত শুরু করেছে, যেখানে তিনটি ব্যাংক-পূবালী, সাউথ ইস্ট ও ন্যাশনাল ব্যাংক-মিলিয়ে কেয়া কসমেটিকস লিমিটেডের ৪৯ কোটি ডলার বা ৫৮৮০ কোটি টাকার রপ্তানি আয় প্রতিষ্ঠানটির বৈদেশিক মুদ্রায় পরিচালিত ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা না করার অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগকারী প্রতিষ্ঠানটি এ বিষয়ে অর্থ উপদেষ্টা এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে পৃথক চিঠি পাঠিয়ে তদন্তের দাবি জানিয়েছে।
দুর্ভাগ্যজনক হলেও, কেয়া কসমেটিকস লিমিটেড বর্তমানে সরকারের তালিকায় একটি ঋণখেলাপি প্রতিষ্ঠান হিসেবে চিহ্নিত। তবে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান আবদুল খালেক পাঠান যুগান্তরকে বলেন, “ব্যাংকের ভুল হিসাবের কারণে আমাদের নাম খেলাপির তালিকায় উঠে এসেছে। ব্যাংকগুলোর কাছে আমাদের পাওনা ৫০০০ কোটি টাকার বেশি অথচ খেলাপি হিসাবে ১ হাজার ৩৫২ কোটি টাকার দাবি করছে।”
মার্কিন ডলারের স্থানান্তর না হওয়া নিয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন এবং ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলের (এফআরসি) কাছে অভিযোগ করা হয়েছে। এ পরিস্থিতি নিরসনে তিনটি অডিট ফার্ম নিয়োগ দেওয়া হয়েছে কিন্তু এখনও কোনও সমাধান বের হয়নি।
২০১০ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে কেয়া কসমেটিকসের নিট শিপিং অ্যান্ড ইয়ার্ন বিভাগ বিদেশে পণ্য রপ্তানির মাধ্যমে পূবালী ব্যাংক থেকে ১৬ কোটি ৭১ লাখ মার্কিন ডলার আদায় করেছে। কিন্তু ব্যাংকের কাছে প্রতিষ্ঠানের বৈদেশিক মুদ্রায় পরিচালিত অ্যাকাউন্টে কোনও অর্থ স্থানান্তর হয়নি। সাউথইস্ট ব্যাংক একইভাবে ১১১ কোটি ১৮ লাখ মার্কিন ডলার আদায় করেছে, তবে এর বিপরীতে মাত্র ৮৪ কোটি ৫৪ লাখ ডলার স্থানান্তর করেছে। একই চিত্র ন্যাশনাল ব্যাংকের ক্ষেত্রেও দেখা গেছে, যেখানে ২০১২ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে ৮ কোটি ৮৪ লাখ মার্কিন ডলার রপ্তানি আয় আদায় করলেও কেয়া কসমেটিকসের কাছে কোনও ডলার স্থানান্তর করা হয়নি।
পূবালী ব্যাংকের মতিঝিল শাখার জেনারেল ম্যানেজার সুলতানা শরিফুন নাহার এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে শাখার ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার খান মো. জাবেদ জাফর জানান, “আমরা কেয়া কসমেটিকসের কাছ থেকে একটি চিঠি পেয়েছি এবং বিষয়টি নিয়ে কাজ চলছে। তবে প্রতিষ্ঠানের দাবি যৌক্তিক নয়।”
এ প্রসঙ্গে আবদুল খালেক পাঠান আরও বলেন, “আমি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরকে চিঠি দিয়েছি এবং তদন্তের জন্য ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি অ্যান্ড কাস্টমার্স সার্ভিস বিভাগে বিষয়টি পাঠানো হয়েছে। পূবালী ব্যাংক ১৬ কোটি ডলার আদায় করেছে, আর যদি ব্যাংকের ঋণের টাকা আমার কাছে পাওনা থাকে, তবে সেটি অবশ্যই পরিশোধ করব। কিন্তু রপ্তানি আয়ের ডলার আগে আমার ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর করতে হবে।”
এছাড়া, কেয়া কসমেটিকস ২০১৯ সালে সাউথইস্ট ব্যাংকের বিরুদ্ধে বৈদেশিক মুদ্রার হিসাবের জন্য অভিযোগ করেছে। তখন উভয় পক্ষ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মাধ্যমে একটি অডিট ফার্ম নিয়োগের ব্যাপারে সম্মত হয়, তবে ব্যাংক ‘হুদাভাসি চৌধুরী অ্যান্ড কোং’ নামক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অডিট সম্পন্ন করলেও কেয়া কসমেটিকস প্রতিষ্ঠানটি পরে ইসলাম আফতাবুল কামরুল অ্যান্ড কোং নামে আরেকটি প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেয়।
বর্তমানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের খেলাপি ঋণের তালিকায় কেয়া কসমেটিকস লিমিটেডের নাম রয়েছে এবং ব্যাংকের দাবি অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানটির খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ হাজার ৩৫২ কোটি টাকা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদন্তের ফলাফল এখন সবার চোখে।