ইউনিয়ন ব্যাংকে এস আলমের ১৭ হাজার ২২৯ কোটি টাকার ঋণ আদায় হয়নি।
বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে নয়া এক সংকটের সঞ্চার করেছে ইউনিয়ন ব্যাংক। দেশের বিতর্কিত ব্যবসায়ী এস আলম গ্রুপের ২৪৭টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি পরিদর্শন প্রতিবেদনে গুরুতর অনিয়মের তথ্য উঠে এসেছে।।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্যাংকটি এস আলম গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জন্য ১৭ হাজার ২২৯ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে।
যা ব্যাংকটির মোট ঋণের ৬৪ শতাংশ। বিপর্যয়ের এই ঋণের অধিকাংশই জামানত ছাড়া দেওয়া হয়েছে।
প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড জানিয়েছে, এস আলম গ্রুপের এই প্রতিষ্ঠানগুলো এই ঋণের এক টাকাও পরিশোধ করেনি। ঢাকার পান্থপথ শাখার অনুমোদন ছাড়াই ১১৮ কোটি টাকার ঋণ দেওয়া হয়েছে, যার প্রকৃত সুবিধাভোগী এস আলম।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিপোর্টে দেখা যায়, ব্যাংকিং নীতিমালা অনুযায়ী শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকে কোনো গ্রাহক তাদের মুদারাবা টার্ম ডিপোজিটের (এমটিডিআর) বিপরীতে সর্বাধিক ৮০ শতাংশ ঋণ নিতে পারে।
অথচ ইউনিয়ন ব্যাংক, ১৯ গ্রাহকের ৭৯ কোটি টাকার এমটিডিআর বিপরীতে ঋণের সুযোগ ছিল ৬৩ কোটি টাকা।
তারা ৮৫৩ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে, যা নীতিমালার সাফ অগ্রাহ্য। ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও শাখা ম্যানেজারদের অনিয়মের সুযোগ দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ইউনিয়ন ব্যাংক প্রয়োজনীয় এমটিডিআর ছাড়াই ১ হাজার ১৭৫ কোটি টাকার ঋণ দিয়েছে। এসব ঋণ প্রধান কার্যালয়ের অনুমোদন ছাড়া প্রদান করা হয়েছে। ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী,
মোট কর্মী বাহিনীর ৭৬.৩৭ শতাংশ কোনো পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ পায়নি বরং সরাসরি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক ২৭ আগস্ট ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিলেও আগের পর্ষদের নিয়োগ দেওয়া সিনিয়র ম্যানেজমেন্টের সদস্যরা এখনও ব্যাংকে কর্মরত। এটি ব্যাংকটির কার্যক্রমকে আরও প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম এবং তার পরিবারের সদস্যরা ব্যাংক থেকে অর্থ উত্তোলনে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে।
এমনকি, আওয়ামী সরকারের পতনের পরও এস আলম গ্রুপের সদস্যরা ব্যাংক থেকে অর্থ তুলে নিয়ে বিভিন্ন বেনামী প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করছে। প্রতিবেদনে উঠে এসেছে,
গত ১১ আগস্ট ব্যাংকের মুরাদপুর ও বন্দরটিলা শাখা থেকে ৮ কোটি টাকার বেশি নগদায়ন করে তা বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে স্থানান্তরিত করেছেন।
এছাড়া, টপ টেন ট্রেডিং হাউজের অ্যাকাউন্ট থেকেও বিপুল পরিমাণ অর্থ উত্তোলন করে তা অন্য প্রতিষ্ঠানের নামে পে-অর্ডার ইস্যু করা হয়েছে, যা ব্যাংকিং নীতির সরাসরি লঙ্ঘন। এস আলম গ্রুপের বিরুদ্ধে আনীত এই অভিযোগগুলোর তদন্তে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নতুন পাঁচজন স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দিয়েছে।
বর্তমানে, ইউনিয়ন ব্যাংক তারল্য সংকটের মুখোমুখি। কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত ২২ সেপ্টেম্বর ব্যাংকটিকে আন্তঃব্যাংক থেকে ধার নেওয়ার অনুমোদন দিয়েছে, যার আওতায় ১৫০ কোটি টাকার তারল্য সুবিধা ইতিমধ্যে গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সঠিকভাবে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য এই ব্যাংককে নির্দেশনা প্রদান করতে বাধ্য হয়েছে।
এভাবে, এস আলম গ্রুপের সাথে যুক্ত অনিয়ম ও দুর্নীতি ব্যাংকিং খাতে চরম অস্থিরতা সৃষ্টি করছে, যা বাংলাদেশে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাকে সংকটের মধ্যে ফেলতে পারে। এই পরিস্থিতিতে আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষায় দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের গুরুত্ব অপরিসীম।