মডেল ও উদ্যোক্তা মেঘনা আলমের কুকীর্তি এখন প্রকাশ পাচ্ছে। তার মূল টার্গেট ছিল বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও ধনাঢ্য ব্যবসায়ীরা। তিনি এসব উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তিদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে, তাদের ছবি ও ভিডিও গোপনে ধারণ করতেন। পরে এই ছবি ও ভিডিও দিয়ে ব্ল্যাকমেইল করে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করতেন তিনি এবং তার সহযোগীরা।
মেঘনার সহকারী, মানব পাচার চক্রের হোতা মো. দেওয়ান সমীর (৫৮) এই কাজের মূল উদ্যোক্তা ছিলেন। এই চক্রটি সৌদি আরবের বিদায়ী রাষ্ট্রদূত ঈসা বিন ইউসুফ বিন ঈসা আল দুহাইলানকে টার্গেট করে। তারা ৫ মিলিয়ন (৫০ লাখ) ডলার দাবি করেছিল। দেওয়ান সমীরকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং তাকে ৫ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। মেঘনা আলমের গ্রেফতার হওয়ার পর তাকে ৩০ দিনের আটকাদেশ দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে তিনি কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছেন।
মেঘনা আলমের গ্রেফতার হওয়ার পর ঢাকার ডিবি পুলিশের প্রধান রেজাউল করিম মল্লিককে বদলি করা হয়েছে। অনেক পুলিশ কর্মকর্তা মনে করেন, মেঘনা আলমের ঘটনাতে তার কিছু সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে।
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, দেওয়ান সমীরের জিজ্ঞাসাবাদে একাধিক চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। তিনি জানিয়েছেন, সৌন্দর্য্যপূর্ণ মেয়েদের সহায়তায় তিনি উচ্চশ্রেণির ব্যক্তিদের টার্গেট করতেন। তাদের সাথে সম্পর্ক তৈরি করে ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের ছবি ধারণ করতেন। পরে এসব ছবি দিয়ে ব্ল্যাকমেইল করতেন এবং বিপুল পরিমাণ টাকা আদায় করতেন।
দেওয়ান সমীর সৌদি রাষ্ট্রদূত ঈসা আল দুহাইলানকেও টার্গেট করেছিলেন। মেঘনা আলম তার সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তাকে ফাঁদে ফেলেন। এরপর ৫০ লাখ ডলার দাবি করা হয়।
ডিবি পুলিশের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মেঘনা আলম ব্ল্যাকমেইলিংয়ের মাধ্যমে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা করছিলেন। তিনি আরও কিছু বিদেশি কূটনীতিকের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠ ছিলেন, যাদের বেশ কয়েকজন এখন নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত।
মেঘনার পরিবার দাবি করেছে, সৌদি রাষ্ট্রদূতের সাথে তার পরিচয় ৮ মাস আগে হয়েছিল। এরপর তারা একে অপরের সাথে সম্পর্ক গড়ে ছিলেন। ৪ ডিসেম্বর তাদের গোপনে বাগদান হয় বলে দাবি করা হয়, তবে এর কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেননি তারা।
মেঘনার বিরুদ্ধে অভিযোগ অনেক বড়। তার ব্যক্তিগত সম্পর্ক ও কৌশল এখন আলোচনায় এসেছে। পুলিশ আরও তদন্ত করছে। মেঘনার এই কুকীর্তি দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও বিদেশি কূটনীতিকদের সুরক্ষা নিয়ে নতুন প্রশ্ন তুলেছে।
এদিকে, আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল মেঘনা আলমের গ্রেফতার প্রক্রিয়া নিয়ে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, গ্রেফতার প্রক্রিয়া সঠিক ছিল না।
এটি একটি নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। ভবিষ্যতে এ ধরনের অপরাধ রোধে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর আরও সতর্ক হওয়া উচিত।