ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের পাশাপাশি দেশের প্রভাবশালী ১০টি শিল্পগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ব্যাপক আর্থিক তদন্তের অংশ হিসেবে প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকার শেয়ার ও চার হাজার কোটি টাকার ব্যাংক আমানত জব্দ করেছে আদালত। একইসঙ্গে এই পরিবার ও শিল্পগোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে সম্পৃক্ত ৮৪ জনের বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। পাচার হওয়া সম্পদ দেশে ফেরত আনার লক্ষ্যে গঠিত আন্তঃসংস্থা টাস্কফোর্সের সর্বশেষ সভায় এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় জানানো হয়, তদন্তে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে দ্রুততম সময়ে মামলা দায়ের করে তা নিষ্পত্তির জন্য সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে অবিলম্বে প্রয়োজনীয় কূটনৈতিক ও আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। সভায় শেখ হাসিনার পরিবারের আর্থিক অনিয়ম ও সম্পদ পাচার প্রসঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
শেখ পরিবারের বাইরেও যেসব ১০টি প্রভাবশালী শিল্পগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে— এস আলম গ্রুপ, বেক্সিমকো গ্রুপ, নাবিল গ্রুপ, সামিট গ্রুপ, ওরিয়ন গ্রুপ, জেমকন গ্রুপ, নাসা গ্রুপ, সিকদার গ্রুপ, আরামিট এবং একটি অতিরিক্ত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গ্রুপ। এসব প্রতিষ্ঠান এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের আর্থিক লেনদেন, বিদেশে অর্থ স্থানান্তর ও অন্যান্য অনিয়ম তদন্তের আওতায় আনা হয়েছে। জানা গেছে, অভিযুক্তদের অনেকেই ইতোমধ্যে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করেছেন।
এ বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের শীর্ষপর্যায় থেকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এই নির্দেশনার পর পুলিশ সদর দপ্তরের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সমন্বয়ে গঠিত একটি যৌথ তদন্ত দল মাঠপর্যায়ে কাজ শুরু করেছে। এই তদন্ত কার্যক্রমের সমন্বয় করছে বাংলাদেশ ব্যাংকের অধীনস্থ আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা— বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।
বাংলাদেশ ব্যাংকে একটি বিশেষ নিরাপত্তা বিশিষ্ট কক্ষে এসব তদন্ত সংক্রান্ত নথিপত্র প্রণয়ন ও সংরক্ষণের কাজ চলছে। সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, এই তদন্ত কার্যক্রমে কোনো ধরনের রাজনৈতিক প্রভাব না রাখতে এবং সম্পূর্ণ স্বচ্ছ ও আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এগিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, দেশের অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষায় এই পদক্ষেপকে একটি বড় মাইলফলক হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।