হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে বিদেশ থেকে মোবাইল ফোন আনার প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। দেশি-বিদেশি কিছু যাত্রী নানা কৌশলে মোবাইল ফোন বিমানবন্দরের কাস্টমস পয়েন্ট এড়িয়ে বাইরে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বলছে, এসব যাত্রী আইফোন ও স্যামসাংসহ দামি ব্র্যান্ডের ফোন নিয়ে আসছেন এবং এগুলো গোপনে বহনের জন্য নানা অভিনব পদ্ধতি ব্যবহার করছেন।
ঢাকা কাস্টমস হাউজের দেওয়া তথ্যমতে, গত ছয় মাসে কেবল শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকেই মোট ১,৪২৪টি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়েছে। এসব ফোনের বেশিরভাগই উচ্চমূল্যের আইফোন ও স্যামসাং ব্র্যান্ডের। কাস্টমসের প্রিভেনটিভ টিমের উপ-কমিশনার ইফতেখার আলম ভূঁইয়া জানান, মোবাইল ফোন একটি শুল্কায়নযোগ্য পণ্য। কোনও যাত্রী যদি বৈধভাবে মোবাইল আনতে চান, তাহলে বিমানবন্দরে কাস্টমস হলে গিয়ে ফোনের ঘোষণা দিয়ে যথাযথ শুল্ক পরিশোধ করে তা নিতে পারেন। কিন্তু অনেক যাত্রী কৌশলে এ প্রক্রিয়া এড়িয়ে ফোন বাইরে নেওয়ার চেষ্টা করেন। স্ক্যানিং মেশিনে এসব ফোন ধরা পড়লে কাস্টমস তা জব্দ করে শুল্কায়নের পর তা ফেরত দেওয়া হয়।
আইন অনুযায়ী, একজন যাত্রী ট্যাক্স ছাড়াই দুটি মোবাইল ফোন আনতে পারেন এবং অতিরিক্ত একটি ফোন শুল্ক পরিশোধ করে আনতে পারবেন। অর্থাৎ সর্বোচ্চ তিনটি মোবাইল বৈধভাবে আনার সুযোগ রয়েছে। তবে বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, অনেক যাত্রী পাঁচ থেকে দশটি মোবাইল ফোন বহন করে আনছেন। তিনটির বেশি ফোন কাস্টমস কর্তৃপক্ষ জব্দ করে। যাত্রী যদি বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) থেকে অনুমতি নিয়ে এবং শুল্ক পরিশোধ করে তাহলে এসব ফোন ফেরত পাওয়া সম্ভব। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বিটিআরসি অনুমতি দেয় না ফলে মোবাইলগুলো জব্দই থেকে যায়।
গত অক্টোবর থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত সময়ে মোবাইল ফোন জব্দের হিসাব তুলে ধরেন কাস্টমস হাউজের কর্মকর্তা বরুণ দাস। তার তথ্য অনুযায়ী, গত অক্টোবর মাসে ৪৬৫টি, নভেম্বর মাসে ২২০টি, ডিসেম্বরে ৩০৩টি, জানুয়ারিতে ১৮৬টি, ফেব্রুয়ারিতে ৮৩টি এবং মার্চে ১৬৭টি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়েছে।
কাস্টমস কর্মকর্তাদের অভিমত, যাত্রীরা এসব ফোন শরীরের বিভিন্ন স্থানে স্কচটেপ দিয়ে মুড়ে বা লাগেজে লুকিয়ে আনার চেষ্টা করেন। এমনকি কোনো কোনো যাত্রী পাত্র বা ক্রোকারিজের ভেতরে মোবাইল লুকিয়ে কৌশলে শুল্ক ফাঁকি দিতে চেষ্টা করেন। কাস্টমসের নজরদারিতে এসব পদ্ধতি ধরা পড়ছে নিয়মিত।
সম্প্রতি ১৮ এপ্রিল এক চীনা নাগরিকের কাছ থেকে এ ধরনের একটি ঘটনা ধরা পড়ে। স্ক্যানিংয়ের সময় সন্দেহ হলে কাস্টমস কর্মকর্তারা তার শরীর তল্লাশি করে স্কচটেপে মোড়ানো অবস্থায় ১০টি মোবাইল ফোন জব্দ করেন। প্রথমে ওই যাত্রী মোবাইল বহনের বিষয়টি অস্বীকার করলেও পরবর্তীতে কাস্টমসের তল্লাশিতে বিষয়টি প্রমাণিত হয়।
কাস্টমস কর্মকর্তারা জানান, জব্দ হওয়া মোবাইল ফোনগুলোর প্রতিটির বাজারমূল্য বাংলাদেশে লাখ টাকার ওপরে। বিশেষ করে আইফোন ও স্যামসাং ফোনের ক্ষেত্রে এ মূল্য আরও বেশি হয়।
এই পরিস্থিতিতে শাহজালাল বিমানবন্দরে নজরদারি আরও বাড়ানো হয়েছে বলে জানান ঢাকা কাস্টমস হাউজের কমিশনার জাকির হোসেন। তিনি বলেন, কাস্টমস কর্মকর্তাদের অ্যারাইভাল ও ডিপারচার উভয় ক্ষেত্রেই তৎপরতা বাড়ানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অবৈধ পণ্য বা শুল্ক ফাঁকি দিয়ে কেউ যেন বিমানবন্দর অতিক্রম করতে না পারে সে বিষয়ে কাস্টমসের অবস্থান ‘জিরো টলারেন্স’ বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
কমিশনার আরও বলেন, কাস্টমস যাত্রীদের নিয়মিতভাবে সচেতন করছে যাতে কেউ অবৈধ বা আমদানি নিষিদ্ধ পণ্য না আনেন। এ বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারও চালানো হচ্ছে।
সরকারি বিধি অনুযায়ী মোবাইল আমদানিতে নির্ধারিত শুল্ক এবং বিটিআরসি অনুমোদনের বাধ্যবাধকতা থাকলেও এক শ্রেণির যাত্রী নিয়ম ভেঙে তা লঙ্ঘনের চেষ্টা করছে। এই প্রবণতা রোধে কাস্টমসের বাড়তি সতর্কতা ও জবাবদিহিমূলক ব্যবস্থা কার্যকর হওয়া এখন সময়ের দাবি।