দুর্নীতিবিরোধী রাষ্ট্রীয় সংস্থা দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)-এর বিভিন্ন কার্যালয়ে চলতি বছরের প্রথম সাড়ে তিন মাসে ৫ হাজার ৪৫১টি অভিযোগ জমা পড়েছে। এসব অভিযোগের মধ্যে রয়েছে সরকারি দপ্তরে অনিয়ম, ঘুষ বাণিজ্য, সম্পদের হিসাব গোপন, ক্ষমতার অপব্যবহারসহ নানা ধরনের দুর্নীতির তথ্য। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এসব অভিযোগ যাচাই-বাছাই শেষে অনুসন্ধানের উদ্যোগ নিচ্ছে দুদক।
দুদক সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারি মাসে জমা পড়েছে সর্বাধিক ১ হাজার ৯২৩টি অভিযোগ। এরপর ফেব্রুয়ারিতে এসেছে ১ হাজার ৬২৬টি এবং মার্চ মাসে ১ হাজার ৪০০টি অভিযোগ। চলতি এপ্রিল মাসের ১৫ তারিখ পর্যন্ত জমা পড়েছে আরও ৫০২টি অভিযোগ।
প্রতিটি অভিযোগ কমিশনের নির্ধারিত অভিযোগ যাচাই-বাছাই কমিটির মাধ্যমে পর্যালোচনা করা হয়। এই কমিটি প্রাথমিক যাচাইয়ের মাধ্যমে সেগুলোর গ্রহণযোগ্যতা ও গুরুত্ব নির্ধারণ করে। যাচাইয়ে প্রমাণিত হলে সেসব অভিযোগের অনুসন্ধান শুরু করা হয়। পরবর্তীতে কমিশনের অনুমোদন সাপেক্ষে নির্দিষ্ট অনুসন্ধান কর্মকর্তাও নিয়োগ দেওয়া হয়।
দুদকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অভিযোগের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে যার পেছনে একদিকে যেমন জনসচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে অন্যদিকে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় এখন অনেকে সহজেই অনলাইনে অভিযোগ জানাতে পারছেন। তবে সব অভিযোগই যে অনুসন্ধানের পর্যায়ে যাবে তা নয় যাচাই-বাছাই শেষে যেগুলোর মধ্যে পর্যাপ্ত তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায় কেবল সেগুলোর ক্ষেত্রেই অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন।
সরকারি দপ্তরগুলোর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে এবং দুর্নীতিবিরোধী সংস্কৃতি গড়ে তুলতে এসব অভিযোগ ও অনুসন্ধানকে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হিসেবে দেখছে দুদক। সংস্থাটির ভাষ্য, যে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসলেই তা গ্রহণযোগ্য হবে না তবে প্রাথমিক সত্যতা থাকলে সেটিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে।
দুদকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, “অভিযোগ গ্রহণের পরই আমরা দ্রুত যাচাইয়ের কাজ শুরু করি। অভিযোগের ধরন অনুযায়ী প্রয়োজনে অনুসন্ধানও চালানো হয়। তবে লক্ষ্য থাকে—দুর্নীতির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি যেন নিরীহ কেউ হয়রানির শিকার না হয়।”
দুদক কর্মকর্তারা আরও জানান, অনেক সময় একাধিক অভিযোগ একই ব্যক্তির বিরুদ্ধে আসে আবার কোনো কোনো অভিযোগ হয় অস্পষ্ট বা তথ্যহীন। তাই যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়াটি বেশ গুরুত্বের সঙ্গে পরিচালনা করা হয়।
বর্তমানে দেশে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সচেতনতা ও প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ জোরদারের অংশ হিসেবে দুদক নিজস্ব সক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি সাধারণ নাগরিকদেরও অভিযোগ জানানোর ক্ষেত্রে উৎসাহ দিচ্ছে। সরকারি প্রশাসন থেকে শুরু করে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও ভূমিসেবাসহ বিভিন্ন খাতে জমা পড়া অভিযোগগুলো দুর্নীতির চিত্রের একটি সার্বিক প্রতিফলন বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।