দেশে এবং বিদেশে সক্রিয় হানি ট্র্যাপ চক্র আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ফাঁদ পেতে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে। এসব চক্রের মূল টার্গেট ধনাঢ্য ও প্রভাবশালী ব্যক্তিরা, যাদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলে ব্ল্যাকমেইল করে অর্থ আদায় করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সুন্দরী তরুণীদের ব্যবহার করে গড়ে তোলা হচ্ছে এই প্রতারণা চক্র। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বা মেসেজিং অ্যাপের মাধ্যমে টার্গেটদের সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে তোলে তারা। একপর্যায়ে শুরু হয় প্রেমের সম্পর্ক, এরপর ভিডিও কলে খোলামেলা আলাপচারিতার সময় গোপনে রেকর্ড করে রাখা হয় দৃশ্যগুলো। এসব ভিডিও পরবর্তীতে ব্ল্যাকমেইলের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করা হয়।
এছাড়াও অনেক ক্ষেত্রে ভুক্তভোগীদের বাসায় ডেকে এনে জিম্মি করে সরাসরি অর্থ আদায় করছে চক্রগুলো। এসব টাকার বড় একটি অংশ হুন্ডি বা ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে দেশের বাইরে অবস্থানরত নারী সদস্যদের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্যমতে, দেশের বিভিন্ন বয়সী পুরুষ, বিশেষত ২০ থেকে ৫০ বছর বয়সীরা বেশি এই ফাঁদে পা দিচ্ছেন।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সাইবার ইউনিটের তথ্য অনুযায়ী, ভুক্তভোগীদের মধ্যে সরকারি কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী ও প্রবাসীদের সংখ্যাই বেশি। এসব চক্র বিকাশ ও নগদ অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে অর্থ আদায় করছে, যেগুলোর সিম কার্ড বা অ্যাকাউন্টের রেজিস্ট্রেশন ভুয়া।
সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টারে প্রতি মাসে গড়ে ৩০টির মতো গুরুতর অভিযোগ জমা পড়ে। প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে ফেসবুক, ইমো, হোয়াটসঅ্যাপ, টেলিগ্রাম, ইনস্টাগ্রাম, টিকটক এবং ইউটিউবের শর্ট ভিডিও।
এক ভুক্তভোগী সোহেল মৃধা জানান, সৌদি আরব থেকে ইমোতে এক তরুণীর সঙ্গে পরিচয়ের পর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ভিডিও কলে খোলামেলা আলাপচারিতার সময় গোপনে ধারণ করা ভিডিওর মাধ্যমে তার কাছ থেকে এরইমধ্যে চার লাখ টাকা আদায় করা হয়েছে।
আরেক ভুক্তভোগী জানান, ‘লাভারস ওয়ার্ল্ড’ নামের একটি ফেসবুক পেজে ঢুকে নারীর নম্বর নিয়ে যোগাযোগ শুরু করেন। প্রেমের সম্পর্কের পাশাপাশি যৌথ ব্যবসার প্রতিশ্রুতি দিয়ে এনআইডি ও ছবি সংগ্রহ করে নগ্ন ছবি তৈরি করে তাকে ব্ল্যাকমেইল করা হয়।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মতে, বেশিরভাগ ভুক্তভোগীই সামাজিক সম্মান ও মর্যাদার ভয়ে আইনি সহায়তা নেন না, ফলে অপরাধীরা আইনের ফাঁক গলে বেরিয়ে যাচ্ছে। অপরাধ বিশ্লেষকদের মতে, সচেতনতা ছাড়া কেবল আইন প্রয়োগ করে হানি ট্র্যাপের মতো প্রযুক্তিনির্ভর প্রতারণা বন্ধ করা সম্ভব নয়।
সিআইডির ডিআইজি মো. আবুল বাশার তালুকদার বলেন, “মানুষ সচেতন না হলে আমাদের পক্ষে এসব প্রতারণা বন্ধ করা সম্ভব নয়। প্রযুক্তি ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বনই এখন সবচেয়ে জরুরি।”
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সাইবার নিরাপত্তায় ব্যক্তি পর্যায়ে সচেতনতা বাড়ানো না গেলে ভবিষ্যতে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করতে পারে।