সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের বিরুদ্ধে ভুয়া সনদে আত্মীয়দের চাকরি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ অনুযায়ী, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চারজন নিকট আত্মীয়কে বিধিবহির্ভূতভাবে নিয়োগ দেন তিনি। এদের মধ্যে কেউ কেউ প্রয়োজনীয় যোগ্যতা ছাড়াই গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ পেয়েছেন।
লালমনিরহাটের একজন সাংবাদিকের করা ৪২ পাতার অভিযোগের প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক বিষয়টি তদন্ত করে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর ব্যবস্থা নিতে পত্র পাঠিয়েছেন। অভিযুক্ত চারজন হলেন—মন্ত্রীর স্ত্রীর বড় ভাইয়ের মেয়ে উম্মে হাবিবা, মামাতো ভাইয়ের মেয়ে আরিফা খানম ও তাঁর স্বামী নুরুল আলম হবু এবং মামাতো ভাইয়ের ছেলের বউ আমিনা খাতুন।
জেলা প্রশাসকের চিঠি সূত্রে জানা যায়, লালমনিরহাট-২ আসনের এই সাবেক সংসদ সদস্য প্রতিমন্ত্রী থেকে পূর্ণমন্ত্রী হন। মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণে থাকা শেখ জায়েদ বিন সুলতান আল-নাহিয়ান ট্রাস্টে তিনি আত্মীয়স্বজনদের গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দেন। এসব নিয়োগে মানা হয়নি সরকারি চাকরির বিধিনিষেধ।
২০২১ সালের ৪ জানুয়ারি ট্রাস্টের প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদে নিয়োগ পান এইচএসসি পাস উম্মে হাবিবা। অথচ এই পদে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি বাধ্যতামূলক। পরে দারুল এহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সনদ দাখিল করেন তিনি, যা এখনো যাচাই হয়নি। অঙ্গীকারনামা দিয়েও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তিনি সনদ দেননি। এরপর তাঁকে মিরপুর আল-নাহিয়ান শিশু পরিবারের উপ-তত্ত্বাবধায়কের অতিরিক্ত দায়িত্বও দেওয়া হয়, যদিও নিয়ম অনুযায়ী ওই পদে অতিরিক্ত দায়িত্ব পাওয়ার কথা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার। এ ছাড়া হাবিবার বিরুদ্ধে ট্রাস্টের ফ্ল্যাট ভাড়ার অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। তাঁর অবৈধ নিয়োগ বাতিল ও বিচারের দাবিতে ট্রাস্টের কয়েকজন কর্মচারী লিখিত অভিযোগ করেছেন।
ভুয়া সনদে আরও তিনজনের নিয়োগ
- ২০২১ সালের ২৪ জানুয়ারি আল নাহিয়ান উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান মন্ত্রীর আত্মীয় আমিনা খাতুন। তাঁর পদের জন্য স্নাতকোত্তরসহ বিএড ও এমএড প্রয়োজন হলেও সেসব সনদ ছিল না তাঁর।
- ২০১৮ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর একই বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে যোগ দেন মন্ত্রীর মামাতো ভাইয়ের মেয়ে আরিফা খানম। তিনি স্নাতক হলেও তাঁর বিএড সনদটি ভুয়া বলে অভিযোগ উঠেছে।
- আরিফার স্বামী নুরুল আলম হবুও অনিয়মের মাধ্যমে লালমনিরহাট বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে পদোন্নতি পেয়েছেন। যোগদানের তারিখ জালিয়াতি করে ২০২১ সালের বদলে ২০০৮ সাল দেখিয়ে পদোন্নতির ব্যবস্থা করা হয়। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে নুরুল আলম বলেন, ‘বিদ্যালয়ের জমি জবরদখলের প্রতিবাদ করায় আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তোলা হয়েছে।’
অভিযোগকারী সাংবাদিক লাভলু শেখ বলেন, ‘আমি উপযুক্ত প্রমাণসহ ৪২ পাতার অভিযোগ জমা দিয়েছি। জেলা প্রশাসক বিষয়টি আমলে নিয়ে মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছেন।’ জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিক হায়দার বলেন, ‘অভিযোগটি পেয়ে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর পাঠানো হয়েছে। তাঁরা তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।’ উম্মে হাবিবা বলেন, ‘সনদ দাখিলের অঙ্গীকারনামা দিয়েছি, তবে সময় উল্লেখ ছিল না। আগের কর্মস্থল থেকে সনদ পেতে দেরি হয়েছিল। আমি মন্ত্রীর আত্মীয় হলেও যোগ্যতার ভিত্তিতেই চাকরি পেয়েছি।’