বদলির আদেশ উপেক্ষা করে ঠাকুরগাঁও জেলা নির্বাচন কার্যালয়ে বহাল রয়েছেন উচ্চমান সহকারী মহসীন আলী। যদিও তাকে কুড়িগ্রাম জেলা নির্বাচন অফিসে বদলি করে দ্রুত নতুন কর্মস্থলে যোগ দিতে বলা হয়েছিল, তবুও তিনি ঠাকুরগাঁওতেই নিয়মিত অফিস করছেন।
গত ১৫ মে রংপুর আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার স্বাক্ষরিত আদেশে মহসীন আলীকে কুড়িগ্রাম বদলি করা হয় এবং দুই কর্মদিবসের মধ্যে সেখানে যোগদানের নির্দেশ দেওয়া হয়। ২৫ মে তিনি অনলাইনে কুড়িগ্রাম অফিসে যোগদানও করেন। তবে এরপর তিনি ‘পারিবারিক কারণ’ দেখিয়ে এক মাসের ছুটিতে যান এবং বাস্তবে এখনো ঠাকুরগাঁওতেই কর্মরত। এ নিয়ে জেলার সচেতন মহলে ক্ষোভ ও উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। তাদের আশঙ্কা, এভাবে সরকারি আদেশ অমান্য ও ক্ষমতার অপব্যবহার চলতে থাকলে নির্বাচন অফিসের মতো সংবেদনশীল প্রতিষ্ঠানের গোপনীয়তা ও নিরপেক্ষতা হুমকির মুখে পড়বে।
মহসীন আলীর বিরুদ্ধে নানা ধরনের অভিযোগ উঠেছে। তিনি ঠাকুরগাঁও শহরের হাজীপাড়ায় পাঁচতলা ফাউন্ডেশনবিশিষ্ট বাড়ির মালিক। গ্রামেও রয়েছে কয়েক একর জমি। এসব সম্পদের সঙ্গে তার সরকারি বেতনের কোনো সামঞ্জস্য নেই। এছাড়া তিনি নিজের বাড়ির দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলা নির্বাচন অফিসের গুদাম হিসেবে ভাড়া দিয়েছেন এবং এসব গুদামের ‘ঠিকাদার’ বানিয়েছেন তার স্ত্রী ফারজিনা ইসলামকে। অথচ ফারজিনা একজন সরকারি শিক্ষিকা—সদর উপজেলার বড়গাঁও আলিম মাদরাসায় সহকারী শিক্ষক পদে কর্মরত। সরকারি বিধি অনুযায়ী, কোনো সরকারি চাকরিজীবী বা তার পরিবারের সদস্য নিজ দপ্তরের ঠিকাদারি কাজে যুক্ত থাকতে পারেন না। এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শাহীন আখতার বলেন, “একজন সরকারি শিক্ষিকা হয়ে ঠিকাদার হওয়া সম্পূর্ণ বিধিবিরুদ্ধ। বিষয়টি তদন্ত করে আমরা ব্যবস্থা নেব।”
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মহসীন আলী বলেন, “স্যার আমাকে জুন ক্লোজিং পর্যন্ত থাকতে বলেছেন। তাই ঠাকুরগাঁও অফিসে কাজ করছি।” অন্যদিকে কুড়িগ্রাম জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলমগীর ইসলাম বলেন, “তিনি (মহসীন) অনলাইনে যোগ দিলেও ছুটিতে আছেন এবং অফিসে অনুপস্থিত।” জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মুন্জুরুল হাসান বলেন, “জুন ক্লোজিংয়ের কাজ শেষ হলে তিনি চলে যাবেন।”
শুধু মহসীন নন, জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মুন্জুরুল হাসানের বিরুদ্ধেও রয়েছে নানা অনিয়মের অভিযোগ। গুদাম ভাড়ার টাকা থেকে কমিশন নেওয়া, এনআইডি সংশোধন ও বিতরণে আর্থিক লেনদেন এবং নির্বাচনে পক্ষপাতের মতো গুরুতর অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ঠাকুরগাঁওয়ের নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক রাজিউল ফারুক রোমেল চৌধুরী বলেন, “একজন কর্মচারী বদলির পরও আগের কর্মস্থলে কীভাবে বহাল থাকে? এটা সম্ভব হচ্ছে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার প্রশ্রয়ে। এতে অফিসের শৃঙ্খলা ভেঙে পড়ছে। আমরা দ্রুত তদন্ত ও শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।” সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই ঘটনাটি প্রশাসনিক শৃঙ্খলার চরম অবক্ষয় এবং ভবিষ্যতের জন্য অশনিসংকেত।