অগ্রণী ব্যাংককে ‘নন-ব্যাংকিং’ সম্পদ দীর্ঘদিন ধরে নিজের কাছে রাখার অভিযোগে জরিমানা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাম্প্রতিক এক পরিদর্শনে দেখা গেছে, ব্যাংকটি ১১টি ‘নন-ব্যাংকিং’ সম্পদ বহু বছর ধরে নিজেদের অধীনে রেখে দিয়েছে, অথচ সেসব সম্পদের বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে অবহিতই করা হয়নি। এই অনিয়মের জেরে ছয়টি সম্পদের জন্য অগ্রণী ব্যাংককে তিন লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
‘নন-ব্যাংকিং’ সম্পদ বলতে বোঝায় সেই সব জামানত, যেগুলোর মালিকানা ঋণগ্রহীতা ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ার পর আদালতের মাধ্যমে ব্যাংকের হাতে আসে। আইন অনুযায়ী, এ ধরনের সম্পদ ব্যাংকের মূল কার্যক্রমের অংশ নয়, তাই সাত বছরের মধ্যে বিক্রি করে দিতে হয়। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি নিয়ে অতিরিক্ত পাঁচ বছর সময় নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু অগ্রণী ব্যাংক কোনো অনুমতি না নিয়েই কয়েকটি সম্পদ ১১ থেকে ১৭ বছর ধরে নিজের কাছে রেখে দিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ছয়টি সম্পদের বিপরীতে এই জরিমানা করা হয়েছে। এসব সম্পদের সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে চট্টগ্রামের মেসার্স অঙ্গীকার, বগুড়ার বিকন ট্রেড এন্টারপ্রাইজ, দিনাজপুরের মো. আলতাফ হোসেন, জয়পুরহাটের উত্তরা মোটরস অ্যান্ড ফাউন্ড্রিজ, ঢাকার জিনজিরার মেসার্স বেদের হোসেন এবং বঙ্গবন্ধু এভিনিউ শাখার নাইট ডাইং ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড।
অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আনোয়ারুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, তিনি ২০২৪ সালের নভেম্বরে দায়িত্ব নিয়েছেন এবং তার আগেই এসব সম্পদ দীর্ঘদিন ধরে রাখা হয়েছিল। তিনি আরও জানান, বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনে বিষয়টি ধরা পড়ার পর এখন আইন মেনে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
তবে কেন এতদিন এসব সম্পদ বিক্রি করা হয়নি, তার ব্যাখ্যায় ব্যাংক বলছে—বাজার থেকে কাঙ্ক্ষিত দর পাওয়া যাচ্ছিল না। অনেক ক্ষেত্রেই বন্ধক সম্পত্তির মূল্যায়ন সঠিকভাবে হয়নি বা অতিরঞ্জিতভাবে দেখানো হয়েছিল, ফলে তা বিক্রি সম্ভব হয়নি। আবার রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক হওয়ার কারণে বারবার কর্মকর্তাদের বদলি এবং ব্যবস্থাপনার ঘাটতির কারণেও কাজগুলো পড়ে ছিল অবহেলায়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এই ধরনের পরিস্থিতি সাধারণত তখনই হয়, যখন জামানতের বাজারমূল্য সঠিকভাবে নির্ধারণ করা হয় না। ফলে বিক্রি করতে গিয়ে ব্যাংক বিপাকে পড়ে এবং খেলাপি ঋণ আদায়ের প্রক্রিয়াও ব্যাহত হয়।
এখন বাংলাদেশ ব্যাংক নির্দেশ দিয়েছে, এক বছরের মধ্যে এই সম্পদগুলো বিক্রি করতে হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তা করতে ব্যর্থ হলে, ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী প্রতিদিন ৫ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত অতিরিক্ত জরিমানা করা হতে পারে।
অগ্রণী ব্যাংকের এই ঘটনা ব্যাংকিং খাতে আরও স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার প্রয়োজনীয়তাকে সামনে এনেছে। নিয়মিত তদারকি এবং দায়িত্বশীল ব্যবস্থাপনা না থাকলে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের মধ্যেই অনিয়ম জেঁকে বসে, যার দায় শেষ পর্যন্ত বহন করতে হয় দেশের অর্থনীতি এবং জনগণকে।