রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউর সংসদ সদস্যদের আবাসস্থল ‘ন্যাম ভবন’ এখন দীর্ঘদিন ধরে অবহেলায় পরিত্যক্তের পথে। এখানে নেই আগের মতো কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনী, নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণও বন্ধ। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা কয়েকটি ফ্ল্যাটে গাদাগাদি করে বসবাস করছেন। অন্যদিকে, অধিকাংশ ফ্ল্যাট দীর্ঘদিন খালি থাকায় ব্যবহার উপযোগী নয়। সংশ্লিষ্টদের মতে, ত্রয়োদশ সংসদের কার্যক্রম শুরু হলে ভবনগুলো সংস্কারে বড় অর্থ ও সময় ব্যয় করতে হবে।
১৯৯৬ থেকে ২০০১ সালের মধ্যে আওয়ামী লীগ সরকার আমলে মানিক মিয়া এভিনিউ ও নাখালপাড়ায় ন্যাম সম্মেলনের অতিথিদের থাকার জন্য একাধিক ভবন নির্মিত হয়। মানিক মিয়া এভিনিউতে ছয়টি ভবন ও নাখালপাড়ায় চারটি ভবনে মোট ৩৫৫টি ফ্ল্যাট ছিল। ২০০৩ সালে সংসদ সদস্যদের জন্য এগুলো বরাদ্দ দেওয়া হয়। নামমাত্র ভাড়ায় সংসদ সদস্যরা এসব ফ্ল্যাটে বসবাস করতেন। তবে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর ন্যাম ভবনের পরিবেশ সম্পূর্ণ পাল্টে যায়।
মানিক মিয়া এভিনিউর ন্যাম ভবনের ১, ২ ও ৩ নম্বর ভবনের প্রতিটি ফ্ল্যাটের আয়তন প্রায় এক হাজার ২৫০ বর্গফুট। ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ভবনের ফ্ল্যাট বড়, প্রায় এক হাজার ৮৫০ বর্গফুট। প্রতিটি ফ্ল্যাটে তিনটি বেডরুম, একটি ড্রয়িংরুম, একটি ডাইনিংরুম, একটি কিচেন ও দুটি বাথরুম রয়েছে। পেছনে রয়েছে ব্যালকনি। চারপাশে গাছপালা লাগিয়ে সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশ গড়ে তোলা হয়েছিল।
২০০৩ সাল থেকে এই ভবনগুলো এমপি হোস্টেল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছিল। ২০০৬-২০০৮ সালে সংসদ বিলুপ্ত থাকা সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে সাবেক সংসদ সদস্যরাও এখানে ছিলেন। সরকার ভবনগুলো খালি করার চেষ্টা করলেও তৎকালীন সংসদ স্পিকার ও সাবেক এমপিরা আপত্তি জানায়।
২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ছাত্র-জনতা সংসদ ভবন, গণভবনসহ ন্যাম ভবনেও ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। ২০২৩ সালের ৬ আগস্ট রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত করলে সংসদ সচিবালয় সাবেক সদস্যদের কাছে ফ্ল্যাট খালি করার চিঠি পাঠায়। এরপর সাবেক সদস্যরা মালপত্র সরিয়ে নেওয়ার পর হোস্টেল শাখা ফ্ল্যাটগুলো দখল নেয়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, একসময় সংসদ সদস্য, পরিবারের সদস্য ও দলের নেতাকর্মীদের পদার্পণে মুখর ন্যাম ভবন এখন নিঃশব্দ ও পরিত্যক্ত। ময়লা-আবর্জনা জমে আছে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বন্ধ। নিরাপত্তাকর্মীরা অলস বসে থাকেন। দরজা-জানালা খুলে কেউ সহজেই প্রবেশ করতে পারে।
তবে কিছু ফ্ল্যাটে এখনও আলো জ্বলতে দেখা যায়। নিরাপত্তাকর্মীরা জানান, এমপি হোস্টেলের ৬ নম্বর ভবনে প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম ও ব্যারিস্টার মঈনুল করিমসহ কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তা বসবাস করছেন। তাঁদের মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ও বরাদ্দপত্র রয়েছে। প্রসিকিউটর বি এম সুলতান মাহমুদও এই ভবনে ফ্ল্যাট পেয়েছেন, তবে তিনি উঠেননি। বর্তমানে ১, ২ ও ৩ নম্বর ভবনে আনসার, পুলিশ ও এপিবিএন সদস্যরা বসবাস করছেন। বেশির ভাগ ফ্ল্যাটে তারা ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত বসবাস করছেন এবং মৌখিক অনুমতি নিয়ে আছেন। ৪ ও ৫ নম্বর ভবনে কেউ নেই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংসদ ভবন শাখার এক কর্মকর্তা জানান, সংসদ বিলুপ্তির পর আগে কখনো এমপি হোস্টেলে অন্য কাউকে থাকতে দেওয়ার নজির ছিল না। এখন যদিও অনেকে অনুমতি নিয়ে থাকছেন, অনেকে অনুমতি ছাড়াই রয়েছেন। ফ্ল্যাটগুলো যথেচ্ছভাবে ব্যবহার হচ্ছে। নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নেই। গত বছর ৫ আগস্ট পটপরিবর্তনের পর নিচু অংশে ভাঙচুর হওয়ায় কিছু ফ্ল্যাট ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন, তাই ত্রয়োদশ সংসদ শুরুর আগে সংস্কারের জন্য বড় বাজেট ও সময় দরকার।
সংসদ সচিবালয়ের হোস্টেল শাখার সহকারী সচিব আলম মিয়া বলেন, “সংসদ বিলুপ্তির পর সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এমপি হোস্টেল খালি করা হয়। তবে বর্তমানে অনেকে অনুমতি নিয়ে থাকছেন। আনসার, পুলিশ ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান কৌঁসুলিসহ কিছু সরকারি কর্মকর্তা এখানে রয়েছেন এবং নিয়ম মেনে থাকছেন।