ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) জানিয়েছে, বাংলাদেশে জলবায়ু অর্থায়নে জাতীয় তহবিলের (বিসিসিটি) বরাদ্দের ৫৪ শতাংশ দুর্নীতিগ্রস্ত হয়েছে। ২০১০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে ৮৯১টি প্রকল্পে এ ধরনের অনিয়ম দেখা গেছে। এই প্রকল্পে প্রাক্কলিত ক্ষতি ২৪৮.৪ মিলিয়ন ডলার, যা প্রায় ২,১১০.৬ কোটি টাকার সমান।
আজ মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) রাজধানীর ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারে টিআইবি আয়োজিত ‘বাংলাদেশে জলবায়ু অর্থায়নে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানানো হয়। গবেষণায় বলা হয়, ২০১০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে বিসিসিটি থেকে মোট ৪৫৮.৫ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ অনুমোদিত হয়েছে। এর মধ্যে ৫৪ শতাংশ বরাদ্দ দুর্নীতিগ্রস্ত। তহবিল ব্যবস্থাপনায় সংশ্লিষ্ট ট্রাস্টি বোর্ড ও কারিগরি কমিটির সদস্যদের যোগসাজশ এবং রাজনৈতিক প্রভাব প্রকল্প অনুমোদনে দেখা গেছে। তবে বিসিসিটির কর্মকর্তারা এই অনিয়ম প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছেন।
জলবায়ু অভিঘাত মোকাবিলায় বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রয়োজন ১২,৫০০ মিলিয়ন ডলার, কিন্তু ২০১৫ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক তহবিল মিলিয়ে বরাদ্দ হয়েছে গড়ে মাত্র ৮৬.২ মিলিয়ন ডলার। এটি প্রয়োজনের মাত্র ০.৭ শতাংশ। জাতীয় তহবিল থেকে বরাদ্দ প্রতিবছর গড়ে ৮.২ শতাংশ হারে কমছে। আন্তর্জাতিক তহবিল থেকে বরাদ্দ বেড়েছে ৪৩.৮ শতাংশ হারে। তবু এই বরাদ্দ প্রয়োজনের তুলনায় সীমিতই রয়েছে।
প্রতিবেদন বলছে, জাতীয় তহবিলের প্রকল্প বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতা ও ব্যর্থতা বিরাজ করছে। ৮৯১টি প্রকল্পের মধ্যে ৫৪৯টির মেয়াদ বৃদ্ধি পেয়েছে। গড়ে প্রকল্পের মেয়াদ ৬৪৮ দিন থেকে বেড়ে হয়েছে ১,৫১৫ দিন। অর্থাৎ ১৩৩.৮ শতাংশ বৃদ্ধি। কিছু প্রকল্প বাস্তবায়নে ৪ বছরের কাজের জন্য ১৪ বছর লেগেছে। আন্তর্জাতিক তহবিলের প্রকল্পেও বিলম্ব লক্ষ্য করা গেছে। ৫১টি প্রকল্পের মধ্যে ২১টির মেয়াদ বৃদ্ধি পেয়েছে। গড়ে মেয়াদ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২,৯৭৮ দিনে, যা ৫২.১ শতাংশ বৃদ্ধি।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বাংলাদেশের প্রতি বছর জলবায়ু ক্ষতিপূরণ হিসেবে ১০ থেকে ১২ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন, কিন্তু ২০০৩ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে পাওয়া গেছে মাত্র ১.২ বিলিয়ন ডলার, যা খুবই নগণ্য। তিনি বলেন, জাতীয় তহবিলের ৫৪ শতাংশ দুর্নীতির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রকৃত সুবিধাভোগীরা অর্থ পায়নি। রাজনৈতিক প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গ ও সংস্থাগুলো এ অর্থ লুট করেছে। জবাবদিহি ও সুশাসনের ঘাটতি, বাস্তবায়নকারী সংস্থার অদক্ষতা ও অনিয়মের কারণে এই দুর্নীতি হয়েছে। তিনি এ অবস্থার পরিবর্তন আনার দাবি জানিয়েছেন।

