দেশব্যাপী এক মাসের বিশেষ অভিযানে ১১ জন গডফাদারসহ মোট ৮৯ জন শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। সোমবার, ৭ অক্টোবর ২০২৪, রাজধানীর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খোন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান।
অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জানান, গত ৪ সেপ্টেম্বর থেকে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত এই বিশেষ অভিযান পরিচালিত হয়। অভিযানের সময় মোট ৫ হাজার ২৬৪টি অভিযান পরিচালিত হয়, যার ফলে ১ হাজার ১৯৮টি মামলা দায়ের করা হয় এবং ১ হাজার ২৯৯ জনকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়েছে।
গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে ১১ জন কুখ্যাত গডফাদারসহ ৮৯ জন শীর্ষ মাদক কারবারির নাম রয়েছে, যা মাদক বিরোধী প্রচেষ্টার এক উল্লেখযোগ্য সাফল্য হিসেবে দেখা হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে মোস্তাফিজুর রহমান আরও জানান, অভিযানের সময় বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্যও উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে ৩ লাখ ৯ হাজার ১০১টি ইয়াবা, ৩ দশমিক ৭৬ কেজি হেরোইন, ১ দশমিক ১ কেজি ক্রিস্টাল মেথ (আইস), ৩ হাজার ৭৭৪ বোতল ফেনসিডিল, ২ হাজার ৪১৬ বোতল মদ এবং ২ হাজার ৪১৬ ক্যান বিয়ার। এছাড়াও ৫ হাজার ৭৯১টি টাপেন্টাডল ট্যাবলেট, ১ হাজার ৩৮০ লিটার চোলাই মদ, ৬৬৪ কেজি গাঁজা এবং ৪ হাজার ২২২ অ্যাম্পুল ইনজেকশন উদ্ধার করা হয়। অভিযানের সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা একটি শটগান, ৫১টি গুলি এবং ৯টি বিভিন্ন ধরনের যানবাহনও জব্দ করেন। উদ্ধারকৃত সম্পদের মধ্যে ২১ লাখ ১১ হাজার ৭৮০ টাকা উল্লেখযোগ্য।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের বিরুদ্ধে প্রায়শই ছোট মাদক ব্যবসায়ীদের ধরার অভিযোগ ওঠে, তবে মহাপরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান এ অভিযোগ নাকচ করে দেন। তিনি বলেন, “আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে যে আমরা শুধু ছোট মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেপ্তার করি। তবে আমরা বড় মাদক ব্যবসায়ীদেরও আইনের আওতায় আনি।” তিনি এ অভিযানের মাধ্যমেই এর প্রমাণ তুলে ধরেন, যেখানে শীর্ষ পর্যায়ের মাদক কারবারিদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ছিল রাজধানী ঢাকায় অবৈধ বারের কার্যক্রম নিয়ে। এ বিষয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, “কেউ অবৈধভাবে মাদক বিক্রি করতে পারবে না। আমরা এ বিষয়ে সব সময় কাজ করে যাচ্ছি। যদি কারও কাছে এ ধরনের অবৈধ কার্যক্রমের তথ্য থাকে, আমাদের জানালে প্রমাণ সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
অভিযানের সময় উদ্ধার করা বিপুল পরিমাণ মাদক এবং অপরাধীদের গ্রেপ্তার দেশব্যাপী মাদকের বিরুদ্ধে চলমান যুদ্ধের অংশ বলে জানান মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি আরও বলেন, অধিদপ্তর কঠোরভাবে মাদকের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাবে এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
দেশের মাদক সমস্যার বিরুদ্ধে এই বিশেষ অভিযান একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে ধরা হচ্ছে। তবে এ অভিযান শুধু শুরু। দেশজুড়ে মাদকবিরোধী প্রচেষ্টাকে আরও জোরদার করার মাধ্যমে মাদক সমস্যা মোকাবিলায় অধিদপ্তরের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক।