বিশ্বব্যাংক চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৪ শতাংশ হতে পারে বলে জানিয়েছে। ‘উল্লেখযোগ্য অনিশ্চয়তার’ কারণে বিনিয়োগ ও শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি দুর্বল হতে যাচ্ছে এবং সাম্প্রতিক বন্যার ফলে কৃষিতে মাঝারি মানের প্রবৃদ্ধি আশা করা হচ্ছে। দক্ষিণ এশিয়ার জন্য এর আগের পূর্বাভাসের তুলনায় এই অনুমান আরও বেশি প্রত্যাশা করছে প্রতিষ্ঠানটি।
আজ বুধবার প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের সাউথ এশিয়া ডেভেলপমেন্ট আপডেটে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ৩.২ শতাংশ থেকে ৫.২ শতাংশের মধ্যে থাকবে। এর মধ্যবর্তী পয়েন্ট হিসেবে ৪ শতাংশ ধরা হয়েছে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য বিশ্বব্যাংক এপ্রিল মাসে ৫.৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছিল। বর্তমান সরকারের ৬.৭৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে তুলনা করলে বিশ্বব্যাংকের এই পূর্বাভাস উল্লেখযোগ্যভাবে কম। যদি বাংলাদেশে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৪ শতাংশে নেমে আসে, তবে তা হবে কোভিড মহামারির পর সর্বনিম্ন প্রবৃদ্ধি। ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশের প্রবৃদ্ধি ছিল ৩.৪৫ শতাংশ।
বিশ্বব্যাংক চলতি অর্থবছরের পূর্বাভাস ছাড়াও ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়ে ৫.২ শতাংশ করেছে। গত অর্থবছরের জন্য সরকারের অস্থায়ী প্রাক্কলন ছিল ৫.৮২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে নির্ভরযোগ্য পরিসংখ্যানের অভাব এবং রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক আভাসে যে অনিশ্চয়তা রয়েছে, তারই প্রতিফলন ঘটেছে এই পূর্বাভাসে। সংস্থাটি বলেছে, স্বল্প মেয়াদে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা বিনিয়োগ ও শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি বাড়াতে বাধা সৃষ্টি করবে এবং বন্যার ফলে কৃষি উৎপাদন কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
তবে মধ্য থেকে দীর্ঘ মেয়াদে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর সম্ভাবনা আছে। বিশ্বব্যাংক সরকারের বিভিন্ন সংস্কার কর্মসূচির ওপর আশাবাদ প্রকাশ করেছে। এ ক্ষেত্রে আর্থিক খাতে সংস্কার, অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে রাজস্ব বৃদ্ধির পদক্ষেপ, ব্যবসার পরিবেশের উন্নতি এবং বাণিজ্যের পুনর্জীবনের বিষয়গুলো বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
বিশ্বব্যাংক দক্ষিণ এশিয়ার সার্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়ার আশা করছে এবং বলছে, চলতি বছরে এই অঞ্চলে প্রবৃদ্ধি হবে ৬.৪ শতাংশ, যা পূর্ববর্তী পূর্বাভাসের চেয়ে বেশি। এটি দক্ষিণ এশিয়াকে বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত করার ধারাবাহিকতা বজায় রাখবে। নারীদের কর্মক্ষেত্রে বেশি সংযুক্ত করা এবং বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আরও উদারীকরণ করা হলে দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আরও জোরদার হতে পারে বলে বিশ্বব্যাংক মনে করছে।
বিশ্বব্যাংকের এই প্রতিবেদন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির ওপর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকটের প্রভাবকে বিশেষভাবে তুলে ধরছে। গত জুলাই ও আগস্টে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে সরবরাহ ব্যবস্থায় যে বাধা সৃষ্টি হয়েছে, সে বিষয়টি উল্লেখ করে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকও বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ৫.১ শতাংশে নামিয়ে এনেছিল। এই প্রেক্ষাপটে, বাংলাদেশকে একটি সুদৃঢ় অর্থনৈতিক ভিত্তি গড়ে তোলার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।