২০২৪ সালের আগস্ট মাসে ইউরোজোনের খুচরা বিক্রিতে কিছুটা উন্নতি দেখা গেছে, তবে একই সময়ে ইউরোপের সবচেয়ে বড় অর্থনীতি জার্মানির কারখানাগুলোর কার্যাদেশে বড় ধস নেমেছে। ইউরোজোনে সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বর্তমানে একটি মিশ্র চিত্র তুলে ধরছে। খুচরা বিক্রি সামান্য বেড়েছে, কিন্তু উৎপাদন খাত সংকটের মুখে পড়েছে, যা ভবিষ্যতের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ইউরোপের পরিসংখ্যান সংস্থা ইউরোস্ট্যাটের সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, আগস্ট মাসে ইউরোজোনে খুচরা বিক্রি আগের মাসের তুলনায় ০.২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। যদিও জুলাই মাসে এই খাতে স্থবিরতা দেখা দিয়েছিল, তবে আগস্টে কিছুটা পুনরুদ্ধার লক্ষ্য করা গেছে। অন্যদিকে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সামগ্রিক খুচরা বিক্রি একই সময়ে ০.৩ শতাংশ হারে বেড়েছে, যা কিছুটা হলেও অর্থনীতির স্থিতিশীলতার আভাস দেয়।
তবে বার্ষিক হিসাবে পরিস্থিতি খুব একটা আশাব্যঞ্জক নয়। ইউরোজোনের খুচরা বিক্রি বার্ষিকভাবে বেড়েছে মাত্র ০.৮ শতাংশ, আর ইউরোপীয় ইউনিয়নের খুচরা বিক্রি বেড়েছে ১ শতাংশ। অর্থনীতিবিদরা পূর্বাভাস দিয়েছিলেন যে, এই সময়ে খুচরা বিক্রির হার ১ শতাংশের বেশি হতে পারে। কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি পূর্বাভাসের চেয়ে কিছুটা দুর্বল প্রমাণিত হয়েছে, যা ভোক্তা ব্যয়ের সংকটকে প্রকাশ করছে।
বিভিন্ন খাতের মধ্যে বিক্রির পরিসংখ্যানে বৈচিত্র্য দেখা গেছে। খাদ্য, পানীয় ও তামাক পণ্যের বিক্রি ০.২ শতাংশ হারে বেড়েছে, যা সামগ্রিক বৃদ্ধির অংশ। তবে গাড়ির জ্বালানি বাদে অন্যান্য পণ্য বিক্রিতে ০.৩ শতাংশ বৃদ্ধির হার লক্ষ্য করা গেছে। বিশেষায়িত দোকানগুলোতে গাড়ির জ্বালানির বিক্রি বেড়েছে সবচেয়ে বেশি, যা ১.১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
ইউরোজোনের সদস্য দেশগুলোর মধ্যে লুক্সেমবার্গ খুচরা বিক্রিতে সবচেয়ে ভালো করেছে। দেশটিতে বিক্রি বেড়েছে ৫.৩ শতাংশ। এর পরে রয়েছে সাইপ্রাস ও রোমানিয়া, যেখানে যথাক্রমে ২.২ ও ১.৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে, ডেনমার্কে খুচরা বিক্রির পরিমাণ ১.৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে, যা এই অঞ্চলের মধ্যে সবচেয়ে বড় পতন। এছাড়া স্লোভাকিয়া, বুলগেরিয়া এবং ক্রোয়েশিয়ায় খুচরা বিক্রি প্রায় ০.৭ শতাংশ হারে কমেছে।
অন্যদিকে, জার্মানির শিল্প খাতে বড় ধস দেখা গেছে। আগস্ট মাসে জার্মানির কারখানাগুলোর কার্যাদেশ ৫.৮ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে, যা জানুয়ারির পর থেকে সবচেয়ে বড় পতন। উৎপাদন খাতের এই সংকট ইউরোজোনের সামগ্রিক অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। বিশেষ করে ইউরোপের বৃহত্তম অর্থনীতি হিসেবে জার্মানির এই পতন অর্থনীতির অন্যান্য খাতেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এই সংকটের প্রভাব শুধু খুচরা বাজারেই সীমাবদ্ধ নয়। ইউরোর বিনিময় হারও এতে প্রভাবিত হয়েছে। রিপোর্ট প্রকাশের পর ইউরোর বিনিময় হার ১.১০ ডলারের নিচে নেমে যায়, যা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে। ইউরোজোনের অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ এখন ভোক্তা ব্যয়ের পুনরুদ্ধার এবং উৎপাদন খাতের পুনর্জাগরণের ওপর নির্ভর করছে।
অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, খুচরা বিক্রিতে সামান্য উন্নতি হলেও ভোক্তাদের ব্যয়ক্ষমতা এবং উৎপাদন খাতের পুনরুদ্ধার না হলে ইউরোজোনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি পুনরায় দুর্বল হয়ে পড়তে পারে।