বাংলাদেশ ভারতীয় শিল্পগোষ্ঠী আদানি পাওয়ারের কাছ থেকে বিদ্যুৎ কেনার কার্যক্রম অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শুক্রবার রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিদ্যুতের দাম নিয়ে আপত্তি থাকা সত্ত্বেও দেশের বিদ্যুৎ সরবরাহের সংকট এবং আইনি জটিলতার কারণে এই প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে বিদ্যুৎ সরবরাহের চুক্তি বাতিল করা হচ্ছে না।
বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর, তারা শেখ হাসিনা সরকারের সময়ের চুক্তিগুলো জাতীয় স্বার্থের সুরক্ষায় যাচাইয়ের জন্য একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করেছে। এই কমিটি মূলত বিশেষ আইনের অধীনে শুরু হওয়া এবং স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে এমন প্রকল্পগুলো পর্যালোচনা করবে। উল্লেখযোগ্য যে, ২০১৭ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় আদানি গ্রুপের সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তিতে ঝাড়খণ্ডের গোড্ডায় অবস্থিত ১৬০০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ২৫ বছরের জন্য বিদ্যুৎ কিনতে বাংলাদেশ চুক্তিবদ্ধ হয়।
বিদ্যুৎ কেনার ক্ষেত্রে মূল্যের উদ্বেগ নিয়ে এই চুক্তিটি পুনর্বিবেচনার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) একজন কর্মকর্তা ২০২৩-২৪ অর্থবছরের সর্বশেষ অডিটের রিপোর্টে উল্লেখ করেছেন, আদানি পাওয়ারের কাছ থেকে এক ইউনিট বিদ্যুৎ কিনতে বাংলাদেশের খরচ হয় প্রায় ১২ টাকা। যা ভারতের অন্যান্য বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর তুলনায় ২৭ শতাংশ বেশি এবং রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের তুলনায় ৬৩ শতাংশ বেশি।
আদানি পাওয়ারের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, বাংলাদেশ ২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে আদানি ও অন্যান্য ভারতীয় বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ১ হাজার ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ গ্রহণ করছে। তবে, তাদের কাছে এ নিয়ে কোনো ইঙ্গিত নেই যে বাংলাদেশ এই চুক্তি পুনর্বিবেচনা করবে। মুখপাত্র আরও জানান, বকেয়া পরিশোধে সমস্যা থাকলেও তারা বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ অব্যাহত রেখেছেন, যা উদ্বেগের কারণ।
বর্তমানে বাংলাদেশ আদানি পাওয়ারের ৮০ কোটি ডলার পাওনা পরিশোধে কিছুটা সমস্যা অনুভব করছে। এ ছাড়া, ভারতীয় বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোর কাছে বাংলাদেশ প্রায় ১০০ কোটি ডলার পাওনা রয়েছে। দেশের ডলার সংকটের কারণে এই বকেয়া পরিশোধে জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে, যা বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহের স্থিতিশীলতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
আন্তর্জাতিক বাজারে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি এবং অভ্যন্তরীণ সংকটের মধ্যে, বাংলাদেশ সরকারের এই সিদ্ধান্তটি বিদ্যুৎ সরবরাহের ক্ষেত্রে আরও প্রশ্ন তোলেছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশের বিদ্যুৎ খাতের ভবিষ্যৎ কীভাবে এগোবে, তা এখন দেখার বিষয়।